
পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মন্ডলসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে আদালত ফটকে তালা ঝুলিয়ে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
২৬ জানুয়ারি, রবিবার দুপুর ২টার দিকে আদালতের মূল ফটকে তালা এবং সড়ক অবরোধে নেতৃত্ব দেন পঞ্চগড়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী ও মোকাদ্দেসুর রহমান সান।
এর আগে বুধবার বিক্ষোভ মিছিল থেকে জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক এবং মুখ্য বিচারিক হাকিম মেহেদী হাসান মন্ডল, বিচারক আশরাফুজ্জামান ও আবু হেনার অপসারণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা।
তাদের ভাষ্য, এরপর চার দিন চলে গেলেও দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালত ফটকে তারা তালা লাগিয়ে দিয়েছেন।
একইসঙ্গে তারা পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা মহাসড়ক সাত ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখেন। এ কর্মসূচি পূর্ব নির্ধারিত বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
সড়ক অবরোধে দুই পাশে শত শত যানবাহন আটক পড়ে।
গত ২০ নভেম্বর জেলা জজ আদালত এবং মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে কর্মচারী নিয়োগে পরীক্ষা হয়। হাকিম আদালতের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম হওয়ায় কেন্দ্রেই হট্টগোল শুরু হয়। বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি তোলেন।
পরে নিয়োগ বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়। সেই পরীক্ষাতেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
তারা সেদিন জজ ও মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য এবং বিচারকদের মধ্যে এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী প্রীতি মনোভাব বিরাজমান বলে অভিযোগ করেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সাধারণ পরীক্ষার্থীদের পক্ষে নিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় সমন্বয়করা।
তাদের অভিযোগ, কিন্তু জেলা জজ গোলাম ফারুক এবং বিচারিক হাকিম মেহেদী হাসান মন্ডল সমন্বয়কদের দাবির তোয়াক্কা না করে নিজেদের নির্ধারণ করা লোকদের নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করেন।
সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, “বিগত দিনে কর্মচারী নিয়োগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকদের পঞ্চগড়ের আদালতে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক। এবারও অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করছেন। আমরা মেধার ভিত্তিতে সুষ্ঠু নিয়োগের দাবি জানালে এই জজ এবং ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। উনাদের বলতে চাই, আমরা পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট হটিয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “জেলা জজ গোলাম ফরুক এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মন্ডলসহ কয়েকজন বিচারক পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর।”
তার ভাষ্য, “উল্লিখিত বিচারকগণ শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দেদারছে জামিন দিচ্ছেন। এরা পতিত সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মদদপুষ্ট। আজকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার নেই, আনিসুল হকও নেই। গোলাম ফারুক, মেহেদী হাসানরাও থাকতে পারবে না।”
মকলেছুর রহমান সান নামে আরেক সমন্বয়ক বলেন, “চাকরিতে মেধার মূল্যায়ণ না করার কারণেই আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করেছি। শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি, অথচ পঞ্চগড়ের আদালতে এখনো বৈষম্য চলছে। আমরা বৈষম্য লালন করা বিচারকদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
পঞ্চগড় আদালতের পিপি আদম সুফি বলেন, “বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হওয়া উচিত। দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে আসা দরকার।”
পঞ্চগড় ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) ফারুক হোসেন বলেন, “ছাত্রদের অবরোধের কারণে যানজট দেখা দেয়। অবরোধ শেষ হলে যানজট যেন দ্রুত নিরসন করা যায়, সেজন্য আমরা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত আছি।”
জজ আদালত চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
বিবার্তা/গোফরান/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]