
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেদ্রীয় কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, এই যে জুলাইয়ের এতবড় একটি অভ্যুত্থান এটার একটা লিখিত চুক্তি থাকা উচিত। যারা রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে তাদের একটা স্বীকৃতি থাকা উচিত। সে উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ডেকেছিলেন। আমরা মনে করি তাদের সমন্বয়ে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের যারা প্রতিনিধি ছিলেন তারাও তাদের জায়গা থেকে এ বিষয়ে সম্মত হয়েছেন যে অভ্যুত্থানের অবশ্যই একটি ঘোষণাপত্র থাকা উচিত। আমরা বিশ্বাস করি খুব দ্রুততম সময়ে এই ঘোষণাপত্রটি পুরো বাংলাদেশের মানুষের সামনে আসবে।
তিনি শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে পঞ্চগড় এম আর সরকারি কলেজ মাঠে পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
তিনি বলেন, যেখানে আমাদের যে বিগত ১৬ বছরে মানুষের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন এই যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল এই অভ্যুত্থানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি এই অভ্যুত্থানে যা হয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে যেভাবে এই অভ্যুত্থানটি সফল হয়েছে এবং আমরা যারা এই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট বিরোধী সকলে অংশগ্রহণ করেছিলাম আমরা এই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখি তার সামগ্রিক একটি রুপরেখা এই ঘোষণাপত্রে দেখতে পাবো। আশা করি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা এই ঘোষণাপত্র পুরো বাংলাদেশের সামনে আসবে।
তিনি আরো বলেন, এত বড় একটি অভ্যুত্থান এত রক্ত জীবন সামগ্রিক সকল কিছুর যে চাওয়া এই চাওয়াটা শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। আমরা অবশ্যই মনে করি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন হয়ে জনগনের যারা প্রতিনিধি হবে এই স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের কাছে ক্ষমতা যাবে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এটা তো এককথায় অববাস্তব এবং অসম্ভব যে ছয় মাসের মধ্যে নতুন একটি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করা বিচার বিভাগ সংস্কার করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের একচুয়াল যে ভূমিকা সেই জাগায় ফিরিয়ে আনা এটা এককথায় অসম্ভব। সেই জায়গায় আমরা যেটা মনে করি যে অন্তবর্তীকালীন সরকার যেটি বলেছিলেন তাদের জায়গা থেকে ২৬ এর মাঝামাঝির পূর্বে তারা কিন্তু একদম খুব অল্প সময় দিয়েছিলেন ২৬ এর মাঝামাঝি মানে কিন্তু অভ্যুত্থানের দুই বছর হচ্ছে না। এক বছর ৯ মাসের মত। সেই জায়গায় আমরা মনে করি সেটা হোক কিংবা তার যদি দুই চার মাস আগেও তারা মনে করে যৌক্তিক সময়। আমরা আরেকটা শুনলাম যে বলা হচ্ছিল ২৫ ডিসেম্বর বা ২৬ জানুয়ারি এই উইন্টারের মধ্যে এটি হবে সো যেটি যৌক্তিক মনে হবে আমরা সেটিতে কখনো দ্বিমত করবো না কিন্তু যুদি এটা বলা হয় এ বছরের জুন এটা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সেই জায়গায় আমরা মনে করি একটা স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিচার বিভাগ আইশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন। সেই জায়গা থেকে সংস্কারগুলো হওয়ার পরপরই আমরা নির্বাচনের দিকে যাই তাহলে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যে একটা নির্বাচন আমরা প্রত্যাশা করছি সেটি হবে বলে আমরা মনে করি।
সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে এ প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, এটা কোনদিন আগে পরের বিষয় না। আমরা মনে করি দুইটা একই দিন থেকে চলবে। যারা এই সংষÍকার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করবে এবং কাজ করছে তারা কি নির্বাচনের জন্য বসে থাকবে এমন তো না। তারা তাদের সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিদিন কাজ করবে আবার নির্বাচন কেন্দ্র করে যারা কাজ করছে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ তারা তাদের জায়গা থেকে কাজ করে যাবে। দুটো তো আলাদা প্রতিষ্ঠান আলাদা মানুষ করছে। সো আমরা মনে করি দুইটা পাশাপাশি চলতে থাকবে। তবে এই দুইটা পাশাপাশি চলে স্বচ্ছ একটা নির্বাচনের জন্য যে সময়টুকু দরকার ওই সময়টুকু দিতে হবে। আগামী ছয় মাস এটার ক্ষেত্রে কোনদিন যৌক্তিক সময় হতে পারে না। সো আমরা মনে করি দুইটাই পাশ্পাাশি চলুক এবং অন্তবর্তীকালীন সরকার তাদের জায়গা থেকে স্বচ্ছ নির্বাচননের জন্য যেই সময়টুক উপযুক্ত মনে করবে ওই সময় যদি হয় তাহলে আমাদের মনে হয় একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় আসবে।
পঞ্চগড়ে আপনি নির্বাচন করবেন এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এমন প্রশ্নে সারজিস বলেন, ৫ জুন থেকে অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত আমরা নিজেরা কোনকিছু ঠিক করিনি। মানুষ যেটা চেয়েছে আামরা আমাদের জায়গা থেকে সেটা করেছি। একটা কথা স্পষ্ট করে বলি ৩, ৪ ও ৫ আগস্ট কিংবা আমাদের বাংলা ব্লকেড, কিংবা মার্চ টু ঢাকা এই প্রোগ্রামগুলোও কিন্তু জনগণের পালস বুঝে আমরা ঠিক করেছি। সো একই ভাবে প্রত্যেকটা জায়গায় বাংলাদেশের মানুষের ভেতর এখন একটা নতুন জিনিস এসেছে যে যেই তরুণরা সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে এতবড় একটা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে যেই অভ্যুত্থান বিগত ১৬ বছরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো কিন্তু ঘটাতে পারেনি এটা অস্বীকার করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। তাহলে ওই তরুণদের এটুকু সক্ষমতা আছে যে তারা কোন একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে । ওই তরুণদের এ যোগ্যতা আছে যে তারা সংসদে গিয়ে জনগণের কথা বলবে। এই জায়গায় বাংলাদেশে এমন একটি চাওয়া শুরু হয়েছে যে এই তরুণরা আগামীতে মানুষের হয়ে জনগণের হয়ে ওই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করুক। সেই জায়গায় পঞ্চগড়ের মানুষ যদি তাদের জায়গা থেকে এটা মনে করে যে আমি বা অন্য যে কেউ নতুন প্রজন্মের যে কেউ একজন সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তাহলে আমি মনে করি সেটা আমার ক্ষেত্রে নয় অন্য কেউ যদি হয় তাদেরও এই দায়িত্বটা নেয়া উচিত। জনগণ যদি চায় তাহলে আমরা মনে করি এই দায়িত্বটা একটা আমানত এবং অবশ্যই আমাদের এই দায়িত্বটা নিয়ে জনগণের কথা ওই সংসদে গিয়ে বলা উচিত জনগণের কথা শুনে তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরে পঞ্চগড় জেলাসহ রংপুর বিভাগ অনেক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অন্যায় অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেক জেলা উপজেলার মানুষকে নিয়ে গ্রুপ তৈরি করা হবে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে সেটি আমানত মনে করি। এই আমানত রেখে মানুষের কল্যাণে যা কিছু করা যায় আমরা করবো। কয়েকটি রাস্তা ছাড়া কিছুই হয় নি। একটা শিল্প কারখানা হয়নি। আমাদের বেশি কিছু দরকার নেই। যেটুকু পঞ্চগড়ের মানুষের পাওনা বা হক সেটা কিভাবে আদায় করা যায় আমরা প্রাণপন চেষ্টা করবো।
তিনি আরও বলেন, অনেক বিত্তমান ভাল মানুষ রয়েছেন । অনেক গার্মেস্ট মালিক রয়েছেন। তাদের সাথে কেবল যোগাযোগ করা ও সদিচ্ছা থাকা দরকার। আমরা যে শীতবস্ত্র পেয়েছি তা পঞ্চগড়ের প্রত্যেক ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
এর আগে তিনি পঞ্চগড় পৌর এলাকার ২ হাজার তালিকাভুক্ত শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।
কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি নেতা পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আদম সুফি, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা জজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিজার (জিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী, অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান খলিল, গড়িনাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দিপু, বৈষম্যবিরোধা ছাত্র আন্দোলনের নেতা মকাদ্দেসুর রহমান সানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বিবার্তা/গোফরান/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]