সিংড়ায় মুক্তিযোদ্ধা স্কুলে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৫
সিংড়ায় মুক্তিযোদ্ধা স্কুলে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নাটোরের সিংড়ায় মুক্তিযোদ্ধা স্কুল এন্ড কলেজে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য এবং অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারির অভিযোগ উঠেছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও ম্যানেজ প্রক্রিয়া করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। টাকা ফেরত চেয়েও পাচ্ছে না তারা।


নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য ইদ্রিস আলী ২০১৮ সালে লুৎফুল হাবিব রুবেলকে ঐ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেন। এর আগে ২০১৪ সাল থেকে অঘোষিত অধ্যক্ষ ছিলেন ইদ্রিস আলী। সভাপতি করা হয় নুরুল ইসলাম নামে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে। নামমাত্র তার স্বাক্ষর নেয়া হলে ও সব হিসাব, নিকাশ এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মূল হোতা ইদ্রিস আলী।


জানা যায়, ২০১৪ সালে মহেশচন্দ্রপুর গ্রামে গড়ে উঠে মুক্তিযোদ্ধা স্কুল এন্ড কলেজ। বেকার যুবকদের চাকুরি দেয়ার নাম করে গড়ে উঠে প্রতিষ্ঠানটি। পুরো প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ভার নেন ইদ্রিস আলী৷ অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবিব রুবেলের ছত্র-ছায়ায় এবং তার পরামর্শে বেকার যুবকদের চাকুরি দেয়ার নাম করে নিয়োগ বাণিজ্যে শুরু করেন।


বিভিন্ন পত্রিকায় সার্কুলার দিয়ে ৭০ থেকে ৮০ জন পুরুষ ও নারী শিক্ষক, কর্মচারী নিয়োগ দেন। যাদেরকে কোনো নিয়োগপত্র না দিয়ে মৌখিকভাবে নিয়োগ কিংবা পদ দেয়া হয়। স্কুলের কেজি শাখা, প্রাথমিক শাখা, মাধ্যমিক শাখা, ভোকেশনাল শাখায় একের পর এক নিয়োগ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।


অপরদিকে ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারির ও অভিযোগ উঠেছে। জবেদা নামে এক অফিস সহকারী নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে ঐ নারীর সংসার ভেঙে দেন তিনি। ভুক্তভোগী জবেদা বলেন, ইদ্রিস আমাকে তার প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে আমার সংসার ভাঙছে। আমাকে রেখে পালিয়েছে। এখন আমি আমার প্রথম স্বামীর সংসারে ফিরে এসেছি।


এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতে এসে প্রতারণার শিকার অনেকে। এর মধ্যে ভুক্তভোগী ফারহানা জানান, আমি দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছি। আমাদের কাছ থেকে কয়েক দফায় টাকা নেয়া হয়। স্কুলে এখন আর কাউকে ঠিকমতো পাওয়া যায় না। টাকা ফেরতের জন্য ফোনে ইদ্রিস আলীকে বলা হয়েছে। এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। টাকা ফেরত পাইনি।


ভুক্তভোগী সারোয়ার হোসেন বলেন, আমাকে ভোকেশনাল শাখায় নিয়োগ দিবে বললে নিয়োগ দেয়নি। লক্ষাধিক টাকা দিয়েছি। এখন ফোন ধরে না। আমি টাকা ফেরত চাই। কারণ প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতি চলছে।


অভিযুক্ত ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ইদ্রিস আলী মুঠোফোনে বলেন, আমি জরুরি কাজে ঢাকায় আছি। প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দাখিল করা হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে বলেন, নিয়োগের টাকায় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা হয়েছে। সরকারের অনুদানের অর্থ কিংবা কত টাকা ফান্ডে রয়েছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।


ঐ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, তিনি অসুস্থ। শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের কোনো লেনদেনে সে যুক্ত নাই। শুধুমাত্র স্বাক্ষর লাগলে দেয়া হয়। এর বাইরে ২/১ টি জাতীয় দিবসে স্কুলে যাওয়া হয় মাত্র। তাছাড়া সব কাজ ইদ্রিস আলী করে থাকে।


সিংড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুর রহমান জানান, ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক ও ভোকেশনাল শাখা অনুমোদন পেলেও অন্য শাখার অনুমোদন নাই। আর নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি তাদের এখতিয়ার। তবে এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।


বিবার্তা/রাজু/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com