
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক পরিচিতির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। যেমন শ্মশানের পাশে কবরস্থান, মাদরাসা লাগোয়া মন্দির। তবে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের পাশাপাশি চিরঘুমের ঠিকানা জেলাতে একটিই। যেটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের ৯ নং ওয়ার্ডের মৌড়াইল এলাকায় দক্ষিণ মৌড়াইলে অবস্থিত।
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মুসলমান ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে মাটির নিচে হয় তাদের শেষ ঠিকানা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বসবাসরত এই দুই সম্প্রদায়ের বেলায়ও একই রীতি। তবে ব্যতিক্রম হলো, মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থান ও সমাধিক্ষেত্র (চার্চ ইয়ার্ড) একবারে পাশাপাশি। আলাদা সীমানা প্রাচীরে বিভাজন করা কবরস্থান ও সমাধিক্ষেত্রে চিরঘুমে শান্তিতে শুয়ে আছে দুই সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ পার উল্টোদিকে দক্ষিণ মৌড়াইলের পথ ধরে কয়েক'শ গজ পশ্চিমে যেয়েই হবে কবরস্থান ও খ্রিস্টানদের সমাধিক্ষেত্রের দেখা। মুসলমানদের এ কবরস্থানে সর্বসময়ই কয়েক'শ জনের কবর দৃশ্যমান থাকেই।
কবরস্থানটির ঘেঁষেই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের
সমাধিক্ষেত্র (চার্চ ইয়ার্ড) স্থানটি। ধর্মীয় চিহ্ন দেখে স্পষ্টতই বুঝা যায় এটি একটি খ্রিস্টানদের সমাধিক্ষেত্র। এই সমাধিক্ষেত্রে শতাধিক খ্রিস্টান শুয়ে আছে বলে ধারণা পাওয়া যায়।
কবরস্থান ও সমাধিক্ষেত্রটি ঠিক কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটির স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। কবরস্থানের সামনে থাকা একটি লেখায় দেখা যায়, ১৯৭৮ সালে এর সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল।
সেই অনুযায়ী কবরস্থান ও সমাধিক্ষেত্র শত বছরের পুরনো বলে অনেকেই দাবি করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে মুসলমান ও হিন্দুর পাশাপাশি খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরাও বসবাস করেছেন। মৌড়াইল এলাকায় দক্ষিণ মৌড়াইলে একটি মিশনারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খ্রিস্টানদের মাধ্যমে এই মিশারীতে পরিচালিত হয় একটি মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, খ্রিস্টান শিক্ষকদের দ্বারা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এ সম্প্রদায়ের একটি গীর্জার ও রয়েছে। এই খৃষ্টান মিশনারীটি ধারণা করা হয় পূর্বের ভারতবর্ষের আমলে ব্রিটিশদের আগমনের পর এই খ্রীষ্টন মিশনারী প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়েছিল। এই মিশনারীটি মা ও সকল বয়সী মানুষদের সেবা এবং বিদ্যাপাঠ দানে বেশ সুনাম কুড়িয়ে এখনও এই ঐতিহ্যটিকে সুনামের সহিত ধরে রেখেছে এই সম্প্রদায়বাসীরা। সব ধর্মের মানুষই এ দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে সকল সেবা নিয়ে থাকেন। একজন সাংবাদিক হয়ে গর্ব বোধ করি, এই মিশনারী মাতৃসদনে আমার বাবা-মায়ের সন্তান আমরা সকল ভাইরাসহ- এমনকি পরবর্তী আমাদেরও পরিবারের সকল সন্তানের জন্ম এবং আমরাসহ আমাদের সন্তানরাও এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হতে পেরে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক রিয়াজ আহমেদ অপু বলেন, ‘আলাদা দুটি সীমানা প্রাচীর মুসলমান ও খ্রিস্টানদের কবরস্থানকে ভাগ করেছে। খ্রিস্টানদের কবর দিতে এখানে কোনো সমস্যা হয় না। আমাদের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। আমরা একে অপরের যে কোনো কাজে সহযোগিতা করি।’
খিস্ট্রান সম্প্রদায়ের মার্টিন নাথ বলেন, ‘আমার ধারণা কবরস্থান ও সামাধিক্ষেত্রটি প্রায় ১০০ বছরেরও পুরনো হতে পারে । কিন্তু আজও আমাদের মাঝে এ নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। আমরা একে অপরের পরিপূরক। এটি সম্প্রীতির উদাহরণও হতে পারে।’
তিনি জানান, সম্প্রতি কবরস্থানের সীমানা দেওয়াল ভেঙে আমাদের দেওয়ালও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পরিষদে একটি আবেদনও জমা দেওয়া আছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক সাংবাদিক ও অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, ‘আমরা তো একই স্রষ্টার সৃষ্টি। চির বিদায়ের পর মুসলমান ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন যেভাবে পাশাপাশি শান্তিতে শুয়ে আছে জীবদ্দশায়ও আমরা এমন দেখতে চাই। আমরা চাই আমাদের বিশ্বাসের জায়গাটা এক থাকুক।’
সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনেক উদাহরণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের এলাকায় মুসলমান ও খ্রিস্টানদের পাশাপাশি কবরস্থান। খ্রিস্টানদের কবরস্থানটি রক্ষায় আমি যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করি। তাদের কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর বিষয়েও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি।’
বিবার্তা/আকঞ্জি/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]