
২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীবাহী বাসের নিচে পিষ্ট হয়ে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান টিটু। ক্যাম্পাসের বাসে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এসময় নিহত টিটুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেয় প্রশাসন। তবে এ ঘটনার দশ বছর পেরোলেও সেই আশ্বাস পূরণ করেনি প্রশাসন। পরিবারের অভিযোগ, বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অপরাধে তাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
৩ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদেরকে এসব কথা জানান পরিবারের সদস্যরা। এসময় নিহত টিটুর বাবা, চাচা, ছোট ভাই ও দুই বোন উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীবাহী বাসে উঠতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যান টিটু। এসময় পেছন থেকে আসা অপর একটি বাসের নিচে চাপা পড়লে গলা ছিঁড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবাহী অন্তত ৩০ টি বাসে আগুন দেয় ও ক্যাম্পাসের সব ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালান।
ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে প্রায় চারমাস বন্ধ থাকে ক্যাম্পাস। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে প্রায় চারমাস বন্ধ থাকে ক্যাম্পাস। ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। এছাড়া ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সংবাদ সম্মেলনে টিটুর পরিবার জানান, টিটুর মৃত্যুর পর তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজন সদস্যকে ক্যাম্পাসে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোন আশ্বাস পূরণ করেনি প্রশাসন। এছাড়া সেসময় টিটুর ছোট বোনকে প্রক্টর অফিসে মাসিক থোক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু দশ বছরেও তার চাকরি স্থায়ী করা হয়নি।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিন দফা দাবি পেশ করেন টিটুর পরিবার। দাবিগুলো হলো- টিটুর বোনের চাকরি স্থায়ীকরণ, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও টিটুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের নামকরণ।
টিটুর ছোট বোন রত্না আজিজ বলেন, ওই সময় আমার ভাই মারা গেলেও এর পুরো ফায়দা লুটেছে বাস মালিক সমিতি। তখন আন্দোলনের ফলে তাদের পুরাতন বাসগুলো পুড়ে গেলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে সবাই আশ্বাস দিয়েই ১০ বছর পার করে দিয়েছে। আমরা কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি।
টিটুর পিতা আব্দুল আজিজ বলেন, আমি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ১ নং এস.বি.কে ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। আমার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমাদের আশানুরূপ সহযোগিতা করা হয়নি। আমার হার্টের সমস্যার কারণে ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছে। এদিকে আমর দুই মেয়ে ও এক ছেলের লেখাপড়া চলমান রয়েছে। পরিবারের বড় ছেলে টিটু আমাদের হাল ধরার কথা ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর কারণে আমরা মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার মেয়ের চাকরি স্থায়ীকরণ ও আর্থিক সহযোগিতা চাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিগত সময়ের প্রশাসন কি ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন সেটি আমার জানা নেই। তবে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার যদি প্রশাসনের নিকট সহযোগিতা কামনা করে তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে বসবো এবং বিবেচনাপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
বিবার্তা/জায়িম/এনএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]