তেঁতুলিয়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগে তিন সাংবাদিকসহ আটক ৪
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৪০
তেঁতুলিয়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগে তিন সাংবাদিকসহ আটক ৪
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগে চার সাংবাদিক ও এক ড্রাইভারসহ পাঁচ জনকে আটক করেন স্থানীয়রা। এসময় সংঘবদ্ধ চক্রের ক্যামেরাম্যান হামিদুল ইসলাম পালিয়ে যান।


২৫ নভেম্বর, সোমবার দুপুরে তেঁতুলিয়া শালবাহান দাখিল মাদরাসা হতে তাদেরকে আটক করা হয়।


আটককৃতরা হলেন, আল হেদায়েতুল্লাহ সিদ্দিকী (২৫), আব্দুর রহিম (২৫), দেলোয়ার হোসেন (৩৫), গাড়ি চালক অহিদুল ইসলাম (৩৫)।


এদের মধ্যে আল হেদায়েতুল্লাহ সিদ্দিকী নীলফামারীর সদরের কিসামত পঞ্চপুকুর এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে, আব্দুর রহিম দিনাজপুর খানসামা এলাকার নদীপাড়া এলাকার ইসকিন্দার আলীর ছেলে, গাড়ি চালক অহিদুল ইসলাম নীলফামারীর সদরের জয়নাল আবেদিনের ছেলে ও দেলোয়ার হোসেন দিনাজপুর খানসামার আব্দুস সামাদের ছেলে।


পলাতক ক্যামেরাম্যান হামিদুল ইসলাম নীলফামারীর পঞ্চপুকুর সিরাজুল ইসলামের ছেলে। এদের মধ্যে হেদায়েতুল্লাহ দৈনিক অগ্নিশিখা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি, আব্দুর রহমান দৈনিক শিক্ষা ডটকম রংপুর ব্যুরো চিফ, দেলোয়ার হোসেন নীলফামারী জেলার স্টাফ রিপোর্টার বলে পরিচয় দেন।


জানা যায়, সোমবার দুপুরে একটি মাইক্রোবাস করে সাংবাদিক পরিচয়ে তেঁতুলিয়ার শালবাহান দাখিল মাদরাসায় যান ওই পাঁচ সাংবাদিক। মাদরাসা প্রবেশ করেই মাদরাসার সুপারের কাছে তারা বিভিন্ন তথ্য চেয়ে বসেন। এর মধ্যে মাদরাসার সুপার রফিকুল ইসলাম তথ্য নিতে লিখিতভাবে আবেদন করতে বললে তারা বিভিন্ন হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করেন। বিষয়টি জানাজানি হলো স্থানীয় সাংবাদিক ও স্থানীয় লোকজন ছুটে আসেন ওই প্রতিষ্ঠানে। খবর পেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে যান মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী।


পরে তিনি তাদের সাথে কথা বললে অসংলগ্নতা পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে তারা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠে এই সাংবাদিকদের নামে। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী মাদরাসার শিক্ষক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিকেলে তাদেরকে তেঁতুলিয়া নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে যান।


নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বী তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা সঠিকভাবে তথ্য দিতে না পারায় তারা প্রতারক বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। তারা তিন-চারটি প্রতিষ্ঠান হতে ৯ হাজার টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে সে টাকা ফেরত দিতে চাইলে সন্ধ্যায় তাদেরকে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, এর আগেও সাংবাদিকতার নামে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরাও খেয়েছেন এরা।


উপজেলার শালবাহান দাখিল মাদরাসার সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরের আগেই একটি মাইক্রোবাস নিয়ে আমাদের মাদরাসায় প্রবেশ করে। মাদরাসা ঢুকেই তথ্য চাইতে শুরু করেন। আমি বলি, কী তথ্য জানতে চান তা লিখিতভাবে দিতে বললে তারা আমাকে কীভাবে তথ্য নিতে হয় হুমকি প্রদর্শন করেন। তাদের আচরণ দেখে সন্দেহ হলে বিষয়টি আমি আমাদের শিক্ষা অফিসারকে জানাই। তারা বেশ কয়েকটি মাদরাসায় গিয়ে রিপোর্টের ভয়ভীতি দেখি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জানতে পারি। পরে তাদেরকে ইউএনও স্যারের কার্যালয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় তারা প্রতারক বলে স্বীকার করলে তাদেরকে থানা হেফাজতে নেয়া হয়।


তবে ওই সাংবাদিকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, তারা পেশায় সাংবাদিক। তারা রোববার (২৫ নভেম্বর) রংপুর থেকে তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছিলেন। পেশাগত সাংবাদিক হওয়ায় তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পজিটিভ রিপোর্ট করার কথা বলে তথ্য চান। তথ্যে গরমিল থাকায় তাদেরকে ভয়ভীতি দেখান এবং টাকা নেয়ার কথাও স্বীকার করেন তারা। তারা ভুল করেছেন বলে স্বীকার করেন।


তেঁতুলিয়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী বলেন, দুপুরে শালবাহান দাখিল মাদরাসা থেকে ফোনে জানতে পারি সেখানে কতিপয় সাংবাদিক গিয়ে ঝামেলা করছেন। খবর পেয়ে দ্রুত মাদরাসায় গিয়ে মাদরাসার সুপার, শিক্ষকদের সাথে কথা বলে অভিযোগ শুনি। পরে ওই তাদের সাথে কথা বললে কথার অসংলগ্নতা পাই। ওই সময়ের মধ্যে তারা আরও কিছু মাদরাসায় গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত হই। পরে তাদেরকে আমাদের ইউএনও স্যারের কাছে নিয়ে আসি।


এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত কবীর সাংবাদিক ও ড্রাইভারসহ চারজনকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার প্যানেল কোটের মাধ্যমে তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


বিবার্তা/গোফরান/এনএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com