
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে বিগত সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী লোকজন জড়িত ছিল মর্মে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি বলেন, পাশে থেকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদেরও নাম এসেছে। তদন্তের স্বার্থে নাম বলায় আইনি বাধা থাকায় এখন বলা যাচ্ছে না। যেহেতু কোনো বাধা নেই, তাই তদন্ত শেষে এ নামগুলো সামনে আসবে।
১৩ অক্টোবর, রবিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌরশহরের পুরাতন বাস স্টেশনের একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শিশির মনির বলেন, শুধু সরকারের দায়িত্বে ছিলেন তা নয়, তাদের পাশে থেকে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম এসেছে। আপাতত তদন্ত চলা অবস্থায় সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম বলায় আইনগত বাধা আছে, তাই আমি বলছি না। তবে ইন্ডিকেশন আছে, ইশারাই যথেষ্ট আমার মনে হয়। সেজন্য নামগুলো এলে এখন আর অসুবিধা হবে না। বেশ কয়েকটা রিপোর্ট আছে, রিপোর্টগুলো এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামীকাল সোমবার (১৪ অক্টোবর) মিটিং আছে, সে মিটিংয়ে হয়ত আরেকটু ক্লিয়ার হওয়া যাবে।
২০১২ সালে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রায় ১২ বছর পর বর্তমানে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। আমি যুক্ত হওয়ায় প্রাথমিক নথি দেখার সুযোগ হয়েছে। মামলাটি ইনভেস্টিগেশনে থাকা অবস্থায় কিছু বলা যায় না। বেশ কিছু সেনসেটিভ ব্যক্তির নাম আছে। সংবেদনশীল মানুষ এর সঙ্গে জড়িত মর্মে প্রাথমিক কর্মকাণ্ডে বোঝা যায়। সেই সংবেদনশীল ব্যক্তির নাম আমি এখানে বলছি না। তবে আমার কাছে মনে হয় এখন তদন্তটা প্রপার ডাইরেকশনে আছে। যে জায়গায় গিয়ে থেমে গিয়েছিল সেই জায়গায় সরকার এখন আর কোনো বাধা দিচ্ছে না। যেহেতু বাধা দিচ্ছে না তাই দুই একটি স্টেটমেন্ট আসছে। খুবই সেনসেটিভ স্টেটমেন্ট, খুবই সেনসেটিভ ইনফরমেশন। এজন্য আমার কাছে মনে হয় অগ্রগতি হবে প্রপার লাইনে।
তিনি বলেন, একটা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট আছে ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) রিপোর্ট। সাগর এবং রুনির গায়ে দুজন ব্যক্তির ডিএনএ শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের খোঁজা হচ্ছে। আশা করি, এই সংক্রান্ত তথ্য আপনারা স্বল্প সময়ের মধ্যে জানতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, অপরাধের সঙ্গে সাধারণত ব্যক্তিই জড়িত থাকে। তবে গণমাধ্যম ও এর বাইরে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামও এসেছে। এগুলো ক্রস চেক করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খাঁন, নায়েবে আমির ও সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শামসুদ্দিন আহমদ, সেক্রেটারি মুহাম্মদ মুমতাজুল হাসান আবেদ।
মতবিনিময় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি পঙ্কজ কান্তি দে। এছাড়াও বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য ও প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক অ্যাড. খলিল রহমান, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল ২৪ প্রতিনিধি অ্যাড. এআর জুয়েল, কার্যনির্বাহী সদস্য ও এনটিভির জেলা প্রতিনিধি দেওয়ান গিয়াস, সাধারণ সদস্য ও দৈনিক সংগ্রামের জেলা প্রতিনিধি অ্যাড. মহসিন রেজা মানিক। এ সময় প্রেস ক্লাবের সব সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। তাদের একমাত্র ছেলে পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরওয়ার মেঘ সে সময় বাসায় ছিল। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যার ঘটনায় আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত ১১১ বার সময় বাড়ানো হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় বাদীপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিবার্তা/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]