ধীরে গতিতে নামছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষত
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৫
ধীরে গতিতে নামছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষত
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় কয়েক দিন ধরে বিপর্যস্ত ছিল ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুর। তবে নামতে শুরু করেছে সেই পানি। এর মধ্য দিয়ে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্লাবিত গ্রামগুলোর অধিকাংশ সড়কই ভেঙে গেছে। পচে গেছে খেতের ফসল। ভেসে গেছে খামারের মাছ। এদিকে গতকাল কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের কয়েক শ হেক্টর জমির ফসল।


এদিকে, বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তত সাড়ে ছয় হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটির ঘরে থাকা পরিবারগুলো। প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করাসহ টিন ও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেগুলো বিতরণ করা হবে।


ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুরে ধীরগতিতে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। এর মধ্যে তিন উপজেলায় ৩৫৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।


এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পাঠদানে বাধ্যবাধকতা নেই বলছেন শিক্ষকরা। যদিও এখন পূজা উপলক্ষে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে।


গত ৪ অক্টোবর পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে ময়মনসিংহের তিন উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন দুই লক্ষাধিক মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জমির আমন ধান, মাছের ঘের, রাস্তা, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা।


তিন উপজেলায় পানি প্রবেশ করে ক্ষতি মুখে পড়ে ২৭৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে ৯ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলো পূজার বন্ধ রয়েছে।


শিক্ষকরা বলছেন, ছুটি শেষে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করবেন। তবে এখনো পুরোপুরি পানি না কমায় ছুটি শেষ হলেও শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে আসতে পারা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।


ফুলপুর উপজেলার সঞ্চুর গ্রামের বাসিন্দা রাকিব হাসান বলেন, “বন্যায় কৃষক যেভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ঠিক একইভাবে আমাদের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পানিতে ক্ষতি হয়েছে। টানা ৪-৫ দিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ছিল। এই দুর্যোগে আমরা শিক্ষায়ও পিছিয়ে পড়বো।”


একই উপজেলার চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইমান আলী বলেন, ধীরগতিতে বন্যার পানি কমছে, আর ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট হচ্ছে। রাস্তাঘাটের খুবই খারাপ অবস্থা হবে পানি কমলে। দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে আমাদের কমপক্ষে দুই থেকে তিনমাস সময় লাগবে। এলাকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার পরিবেশ হুমকির মুখে।


সঞ্চুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ৬ অক্টোবর থেকে বাচ্চারা বিদ্যালয়ে না গেলেও পূজার ছুটির আগ পর্যন্ত নিয়মিত আমরা শিক্ষকরা দুর্ভোগের মধ্যেও গিয়েছি। স্কুলের বারান্দা ও মাঠের ক্ষতি হয়েছে। ছুটি শেষে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষে জানানো হবে।


তিনি আরও বলেন, স্কুলের আশপাশের সব রাস্তায় এখনো কোমর পানি। ছুটি শেষ হলেও বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে আসতে কষ্ট হবে। তবে কেউ যদি না আসতে পারে সে ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।


জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ময়মনসিংহের বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। কংস ও নেতাই নদীর পানি কমছে। ফলে বাড়ি-ঘরে ওঠা পানি দ্রুত গতিতে নামছে। বন্যায় প্রায় দুই লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। পানি ঢুকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও আক্রান্ত হয়েছে। সব বিষয় নিরুপম করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান খান বলেন, হালুয়াঘাটে ১৬৫, ধোবাউড়ায় ৯০ ও ফুলপুরে ১৯ বিদ্যালয়সহ তিন উপজেলায় ২৭৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করে। এর মধ্যে ৬৩টি বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ ছিল।


তিনি বলেন, আগামী ২১ অক্টোবর বিদ্যালয় খোলা হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জানা যাবে। তাৎক্ষণিকভাবে স্লিপের টাকায় মেরামতে কাজ শুরু করা হবে। পরে বরাদ্দ চাওয়া হবে। পানি নামলে বাচ্চারা যেন বিদ্যালয়ে আসতে পারে সেই লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন রাস্তা মেরামতে উদ্যোগী হলে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়বে।


ময়মনসিংহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহসিনা খাতুন বলেন, হালুয়াঘাটে মাধ্যমিকে মোট প্রতিষ্ঠান ৫৭টি, বন্যায় ক্ষতি ও আশ্রয় কেন্দ্র খোলার কারণে পাঠদান বন্ধ ছিল ৫৪টির, পাঠদান চালু ছিল তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ধোবাউড়ায় মোট ৩৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্যায় ক্ষতি ও আশ্রয় কেন্দ্র খোলার কারণে ২০টি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ছিল, চালু ছিল ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ফুলপুরে মোট ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধ নয়টি ও পাঠদান চালু ছিল ৫১টির। মোট ৮৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “বন্যার পানি কমলে ক্ষতি নিরুপম করে পুরোদমে ক্লাস শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।


কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকলেও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম, কালোর ও ধরনী নদীর পানি বেড়েছে। এতে করে এই নদীগুলোর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের কয়েক শ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। আরও এক দিন পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।


রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়নের শ্রীফলগাছি গ্রামের কৃষক গাজিবর রহমান বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে আমন ধান লাগাইছিলাম। নদী দিয়া পাহাড়ি লাল পানি আইসা সব ধান তলায় গেছে।’ কাদাযুক্ত পানিতে তলিয়ে থাকায় খেতের ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান এই কৃষক।


এদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে এর নিম্নাঞ্চলের হাজারো হেক্টর ফসলি জমি ও চর ডুবে গেছে। আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক শ কৃষক।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com