খুলনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা সদর থানার উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের সুস্থতা ও নিহতদের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বন্ধ মিল কলকারখানা চালু, ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী সমাজভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্য বলেন, বিগত দিনে যারা দুর্নীতি ও দুঃশাসনের সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অযোগ্য বলে ঘোষণা করতে হবে। গত আওয়ামী শাসনামলে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে দুর্নীতি, দুঃশাসন ও লুটতরাজের মহড়া চলেছিলো। ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে তাদেরকে বিতারিত করেছে। কিন্তু দুর্নীতিবাজরা এখনো দেশের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানান বিগত দিনে যারা দুর্নীতি ও দুঃশাসন করেছে মানুষের জান মালের ক্ষয়ক্ষতি করেছে তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিদেশে পাচারকৃত সকল অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সেই সাথে দুর্নীতিবাজদের সকল অবৈধ সম্পদকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। কারণ এই সম্পদ দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সম্পদ।
প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। বিগত সরকারগুলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও অবৈধ ক্ষমতার কারণে দেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে।
তাই তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট আহবান জানিয়ে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পীর সাহেব চরমোনাই প্রস্তাবিত পি আর পদ্ধতিতে করার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আরো বলেন, পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেশ গড়ার একটি সুযোগ মিলবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মানের পথ সুগম হবে। কালো টাকা ও পেশী শক্তি থাকবে না সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবে।
গণ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নগর সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, শিল্প নগরী খুলনার অসংখ্য মিল কলকারখানা দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। যার কারণে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছে। নেতারা বন্ধকৃত সকল মিল কলকারখানা অবিলম্বে খোলার আহবান জানান এবং বিগত দিনে যারা এসকল মিল কলকারখানায় অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার আহবান জানান।
নগর সেক্রেটারি মুফতি ইমরান হোসাইন বলেন, গত সিটি করপোরেশন এর মেয়র ও আওয়ামী স্বৈরাচারী নেতারা ইজিবাইক চালকদের লাইসেন্স দেয়ার নামে অবৈধ বাণিজ্য গড়ে তুলেছিল। অসহায় গরীব মানুষদের টাকা আত্মসাৎ করে তারা নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘমেয়াদি করতে চেয়েছিল। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে সকল অরাজকতা রুখে দিয়ে একটি সম্ভাবনাময় খুলনা গড়ে তোলার কথা বলেন।
সদর থানা সভাপতি সভাপতিত্বের বক্তব্যে বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গণহারে ভোট দখল ও কারচুপির পরেও ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মাত্র ২/৪ ঘণ্টার ভোটের মাধ্যমে ৬০ হাজার ভোট পেয়েছে। কারণ খুলনার মানুষ অযোগ্য অথর্ব ক্ষমতালোভীদের থেকে তাদের সমর্থন উঠিয়ে নিয়েছিল। তিনি আগামী মেয়র নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থীকে বিজয়ী করে সুন্দর স্বপ্নীল নগরী গড়ে তুলতে নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে গণ মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াকে দায়িত্ব দেয়ার জোর দাবি জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা সদর থানার সভাপতি আলহাজ্ব আবু তাহেরের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী গাজী ফেরদৌস সুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণ সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, নগর সেক্রেটারি মুফতি ইমরান হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম, কৃষি ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন।
গণ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ সমন্বয়কারী সাজিদুর রহমান বাপ্পি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর শেখ হাসান ওবায়দুল করীম, খালিশপুর থানা সভাপতি হাফেজ আব্দুল লতিফ, দৌলতপুর থানা সভাপতি আলহাজ্ব সরোয়ার হোসেন বন্দ, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি মোল্লা রবিউল ইসলাম তুষার, লবনচরা থানা সভাপতি মাওলানা নাসিম উদ্দিন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর সভাপতি শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আজাদ, মোঃ ইব্রাহিম খান, যুব আন্দোলন নগর সভাপতি ইমরান হোসেন মিয়া, মোঃ আব্দুস সবুর, ছাত্র আন্দোলন নগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহাদি হাসান মুন্না, মোস্তফা আল গালিব, ইসলামী আন্দোলন সদর থানা সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান, আব্দুস সালাম, জয়েন্ট সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা ইসমাইল হোসেন, শ্রমিক আন্দোলন সদর থানা সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন, যুব আন্দোলন থানা সভাপতি মাওলানা হাবিবুল্লাহ গাজী, ছাত্র আন্দোলন থানা সভাপতি হাবিবুল্লাহ মেসবাহ।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, মো. আনোয়ার হোসেন, আব্দুর রহমান সবুজ, মিরাজ মাহাজন, জাবের হোসেন, শহিদুল ইসলাম, গাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, মফিজুর রহমান লাভলু, বখতিয়ার হোসেন, আব্দুল হাই, আব্দুর রাজ্জাক, বদরুজ্জামান, রেদওয়ানুল করীম রিপন, মাহবুব হোসেন, সেলিম হোসেন, রুহুল আমীন বিশ্বাস, আলহাজ্ব হেলাল উদ্দিন, আফজাল হোসেন, রিয়াজ হোসেন, শামসুল হক, আব্দুল্লাহ মাহমুদ, আলাআমীন আকন, সজল হাওলাদার আব্দুল্লাহ, মাসুম বিল্লাহ, ফাহিম হোসেন, শেখ শাহরিয়ার নাফিস, নূরুল করিম, সিয়াম হোসেন প্রমুখ।
গণসমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সিরাত উপলক্ষে সিরাত মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিবার্তা/তুরান/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]