ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালকের ডুপ্লেক্স বাড়ি!
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:২২
ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালকের ডুপ্লেক্স বাড়ি!
সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করে আলোচনায় এসেছেন এক প্রাইভেট কার চালক। নাম তার আতিকুর রহমান (৩৮)। তাকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালক হিসেবে চিনেন সবাই।


প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন গাড়ি চালক আতিক । স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, অবৈধ পন্থায় কামানো টাকা দিয়ে আতিক ডুপ্লেক্স বাড়িটি নির্মাণ করেছেন।


স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিংগাইর পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের কাশিমনগর মহল্লার মৃত লেহাজুদ্দিনের ছেলে আতিকুর রহমান। ছোটবেলায় প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে প্রবেশ করে লেখাপড়ায় ইতি টানেন। এরপর বেবি ট্যাক্সি ড্রাইভিং এর মধ্য দিয়ে শুরু করেন কর্মজীবন। বড় ভাই সরকারি দফতরে ড্রাইভিং চাকরির সুবাদে এক সময়ে তার সহযোগিতায় আতিক কাজ পায় ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর প্রাইভেটকার চালক হিসেবে। তখন থেকেই অবৈধ পথে রোজগার করেন মোটা অঙ্কের টাকা। তার গ্রামের বাড়ি কাশিমনগর মহল্লায় নির্মাণ করেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। স্থাপনাসহ যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকার ওপরে । এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকায় তার রয়েছে একাধিক ব্যবসা।


সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আতিকুর রহমান সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিভাগে গাড়ি চালকের চাকরি নিলেও তিনি গাড়ি চালাতেন সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর। এ সুযোগে তাদের ছত্রছায়ায় নানা অনিয়ম ও তদবির বাণিজ্য করে অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেন মোটা অঙ্কের টাকা। সেই টাকা দিয়েই গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি ও ঢাকায় ব্যবসা করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।


গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আতিকের এ বাড়িটি নিয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আতিক সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিভাগে গাড়ি চালকের চাকরির সুবাদে ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিচিতি পান কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালক হিসেবে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, করোনাকালীন সময়ে সিংগাইর থেকে ইটভর্তি ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করার বিধি-নিষেধ থাকলেও মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে আতিক গাড়ি প্রতি ৫ হাজার টাকা করে নিতেন। ফলে ভাটা মালিকরাও তার শরণাপন্ন হতেন। এভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়াও আতিকের রাজধানী ঢাকায় রয়েছে জেন্টস পার্লার ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা।


অভিযুক্ত আতিকুর রহমানকে তার বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করে বরং বন্ধ করে দেন।


আতিকুর রহমানের ছোট বোন রাবেয়া খাতুন বলেন, আমার ভাই ঢাকায় থাকেন, সরকারি চাকরি ও ইটের ব্যবসা করেন। সাত-আট বছর মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালিয়েছেন। এখন ছোট-খাটো সাহেবের গাড়ি চালায়। বেঁচে থাকাবস্থায় মাকে দেখানোর জন্য ভাই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন।


আতিকুর রহমানের মা ছাহেলা খাতুন বলেন, আমার ছেলে সরকারি চাকরি করে। পাশাপাশি ঢাকায় দুটি দোকান আছে- পার্টনারে ব্যবসা করে। তিনি আরো বলেন, এখন আমার ছেলেটা চাপে আছে, বিভিন্ন লোকজন বাড়িতে এসে টাকা দাবি করে।


সিংগাইর উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুস বলেন, আমাদের কাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করা। তদন্ত করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে এ বিষয়ে কেউ দুদকে অভিযোগ করলে কমিশন তদন্ত করে দেখবে।


এ ব্যাপারে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আজিজ উল্লাহ বলেন, যদি কেউ এরকম করে থাকে- তবে সেটা সরকারিভাবে তদন্ত হবে, মামলা হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।


বিবার্তা/হাবিবুর/রোমেল/জেএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com