রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু (২৩) ছিলেন তার দরিদ্র পরিবারের আশা-ভরসার প্রতীক। তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখত পরিবারটি। ছেলে মেধাবী, তাই অনেক কষ্টে লিপুর পড়াশোনার টাকা জমিয়ে রাখতেন তার বাবা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে লিপুর লাশ নিতে এসে এ কথা জানিয়েছেন, তার চাচা বশির মোল্লা।
তিনি জানান, লিপুর বাবা বদর মোল্লা পেশায় ট্রাকচালক। বর্তমানে পদ্মাসেতু প্রকল্পে তিনি ট্রাক চালান। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় লিপু। লিপুর ছোট বোন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। আর সবার ছোট ভাই এখনও স্কুলে যায় না। তাই লিপুকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতেন বাবা।
পেশায় দর্জি লিপুর চাচা আরও জানান, লিপু তার বাবাকে ফোন করে বলতেন, আব্বা খাওয়ার টাকা নাই। তার বাবা তখন বিকাশে টাকা পাঠাতেন। বাড়ি গেলে তিনিও সাধ্যমতো টাকা দিয়ে সহায়তা করতেন। গত মঙ্গলবার লিপু বাড়ি থেকে এসেছেন। তিনি লিপুকে বাইসাইকেলে করে গ্রামের মোড়ে এনে বাসে তুলে দিয়েছিলেন।
লিপুর সহপাঠীরা জানান, প্রায়ই আর্থিক সঙ্কটে ভুগতেন লিপু। কয়েকদিন আগে মোবাইল ফোন বিকল হয়ে গেলেও তিনি টাকার অভাবে কিনতে পারেননি। বন্ধুদের ফোনে সিম কার্ড ব্যবহার করে কথা বলতেন। লিপুকে ঘিরে পরিবারের সবার অনেক আশা ছিল। লিপু পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন, এমন প্রত্যাশায় দিন গুনছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তার মৃত্যুতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
তারা আরও জানান, আগামী মাসের ২ তারিখ থেকে বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। এ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লিপু। গল্প-গুজব আর আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করতেন লিপু। সহপাঠীদের ডাকতেন ‘মামা’ বলে। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
তবে বছর খানেক আগে একটি ভর্তি পরীক্ষায় অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন লিপু। তারপর কারাগারে ছিলেন তিন মাস। তবে জামিনে বেরিয়ে এসে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল লতিফ হলের ক্যান্টিনের পাশের নর্দমা থেকে লিপুর লাশ উদ্ধার করা হয়।
বিবার্তা/রিমন/মনোজ/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]