শিরোনাম
রাজশাহীর স্কুলে স্কুলে ভোট উৎসব
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০১৭, ১৬:২৪
রাজশাহীর স্কুলে স্কুলে ভোট উৎসব
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

মোট ভোটার এক হাজার ১১৪ জন। আর প্রার্থী ৭৪ জন। ভোটগ্রহণ শুরু হবে সকাল ৯টায়। কিন্তু সকাল ৮টা থেকেই ভোটারদের দীর্ঘ সারি। সবাই স্কুল ড্রেসে। তবে ভোটকেন্দ্রে নেই কোনো পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন। দুপুর ১২টা না বাজতেই প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়ে গেছে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমিনা আস সাদিয়া। 

 

বৃহস্পতিবার এ চিত্র রাজশাহীর পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাদিয়া এই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, প্রার্থী, এজেন্ট-সবাই স্কুলের শিক্ষার্থী। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় তারা স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনে অংশ নেয়।

 

শুধু এই স্কুলই নয়, রাজশাহীর সব মাধ্যমিক-নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবার উৎসবমুখর পরিবেশে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্কুলে স্কুলে নির্বাচিত হয়েছে একজন প্রধানমন্ত্রী ও সাত জন সদস্য। তারা আগামি এক বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবে। স্কুলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেবে তারা।

 

নির্বাচন করতে তফসিল ঘোষণা, মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা, যাচাই-বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার, নির্বাচন কমিশন, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, ব্যালট পেপার, বুথ, স্বচ্ছ ভোটের বাক্স, উৎসাহ-উদ্দীপনা সবই ছিল। ছিল না শুধু পুলিশি নিরাপত্তা, টানটান উত্তেজনা আর বিশৃঙ্খলা।

 

নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই কেউ নির্বাচন কমিশনার, কেউ প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আবার কেউ পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করে। শিক্ষার্থীরাই আবার এ নির্বাচনের ভোটার। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোথাও কোনো হৈ-হট্টগোল হলে সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তরা গিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলেছে, ‘ভোটের দিনে কেউ গণ্ডগোল করে পার পাবে না।’

 

বিদ্যালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ভোটাররা। হাসি হাসি মুখে প্রার্থীদের কেউ কেউ এসে হাত ধরে বলছে, ‘আমাকে একটা ভোট দিও।’

 

পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সানজিদা শারমিন বলে, ‘নানা-নানি, দাদা-দাদি আর মা-বাবাকে ভোট দিতে দেখেছি। আমারও খুব ইচ্ছা হতো তাদের মতো ভোট দিতে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ভোট দেয়ার সুযোগ পাব ভাবিনি। অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’

 

এই স্কুলের দিবা শাখার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছে দশম শ্রেণির ছাত্রী শ্যামলী রহমান। সে বলে, ‘আমার বিশ্বাস ছিল আমি নির্বাচিত হব। হয়েছিও। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মতো আমিও সব সময় ভালো কাজ করব। বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। তাই এ বিষয়েই আমি সবচেয়ে বেশি জোর দেব।’

 

 

প্রধান শিক্ষক তৌহিদ আরা বলেন, ‘স্টুডেন্টস কাউন্সিলের নির্বাচনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের কাছ থেকে বড়দের অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আমি যে সখ্য দেখেছি, তা যদি জাতীয় নির্বাচনগুলোতে দেখা যেত, তাহলে আমাদের দেশের অবস্থা আরো ভালো হতো। খুব শৃঙ্খলার সাথে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।’

 

সহকারী প্রধান শিক্ষক মোবারুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের সব দায়িত্বই পালন করছে শিক্ষার্থীরা। তারা যেগুলো বুঝছে না সেগুলোই শুধু আমরা তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবে। এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হলো। খুবই চমৎকরার।’

 

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, জেলার ৪৫৫টি মাধ্যমিক, ৮৯টি নিম্ন মাধ্যমিক ও দাখিল মাদ্রাসাগুলোতে একযোগে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। পরে গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি শ্রেণি থেকে একজনকে নির্বাচিত করে ভোটাররা।

 

দশম শ্রেণির নির্বাচিত প্রার্থী পদাধিকারবলে প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। আর বাকি চার শ্রেণি থেকে নির্বাচিত চারজন কেবিনেটের সদস্য। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির প্রার্থীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত আরো তিনজনকে কেবিনেট সদস্য করতে পারবে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

 

বিবার্তা/রিমন/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com