
নওগাঁ পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছেন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকটি ইটভাটার মালিককে করা হয়েছে জরিমানা। এমনকি একাধিক ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতো অভিযানের মধ্যেও নওগাঁর মান্দায় তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে। উপজেলার কশব ইউনিয়নের তালপাতিলা শিবনগর এলাকায় অনুমোদন ছাড়াই ইটভাটা নির্মাণে দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বলছেন, প্রভাবশালী হওয়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তিনি ইটভাটা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সংশ্লিষ্টরা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার তালপাতিলা শিবনগর এলাকার মাঠে ‘এসইপি ব্রিকস’ নামে ইটভাটা নির্মাণের কাজ চলছে। এর চারপাশে রয়েছে ফসলি জমি। এছাড়া নির্মাণাধীন ইটভাটা থেকে আধা কিলোমিটার দূরেই জনবসতি। ইটভাটাটি চালু হলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি আশপাশের জমি উৎপাদনহীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকেরা ইটভাটাটির চিমনি নির্মাণের কাজ করছেন। জিজ্ঞেস করলে শ্রমিকেরা জানান, ইট ভাটার মালিক আব্দুল খালেক।
ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৩ অনুযায়ী, ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আছে। এ ক্ষেত্রে সেই নিষেধাজ্ঞা মানা হয়নি। পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তি সনদ ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটাটি। নিয়মনীতি মানা না হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
আশপাশের লোকজন বলেন, শিবনগর এলাকার ফসলি মাঠের প্রায় জমিই তিন ফসলি। এক মাস আগে এই মাঠে ইটভাটা নির্মাণের জন্য নির্মাণসামগ্রী ফেলা শুরু করে। ১৫ দিন আগেই ভাটাটির চিমনি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
তালপাতিলা গ্রামের কৃষক সলোমান হোসেন বিবার্তাকে বলেন, যে মাঠে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে, সেই মাঠের অধিকাংশ জমিই তিন ফসলি। ইটভাটাটি চালু হলে আশপাশের জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ ব্যাহত হবে। যেখানে ভাটা হচ্ছে সেখান থেকে কিছু দূরেই আমার চার বিঘা ফসলি জমি আছে। মাঝে মাঝে টিভি-পত্রিকার খবরে দেখি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে সে ধরনের ক্ষতি হতে পারে। ইটভাটাটির নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে এই মাঠে যাদের জমি আছে, তারা সবাই খুব চিন্তিত।
উপজেলার চকউলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ইয়াকুব আলী মণ্ডল বিবার্তাকে বলেন, ‘একটি জমিতে চাইলেই যা খুশি তাই করা যায় না। ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরেও ওই এলাকায় তিন ফসলি উর্বর জমিতে কীভাবে ইটভাটা নির্মাণ হচ্ছে- আমার বোধগম্য হচ্ছে না। স্থানীয় কৃষকেরা সবাই এই ভাটা নিয়ে ক্ষিপ্ত। কিন্তু ভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদফতরে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না। তিন ফসলি জমিতে কোনোভাবেই ইটভাটা নির্মাণ করতে দেওয়া উচিত নয়।’
শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, আমাদের এলাকাটা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। ইটভাটা নির্মাণ হলে পরিবেশ দূষণের কারণে স্থানীয় লোকজনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে আশপাশের ফসলি জমিতে। এছাড়া ইটভাটার এক থেকে দুই কিলোমিটার মধ্যে আম-কাঁঠাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফলজ গাছের ফল উৎপাদন ব্যাহত হবে। তাই আগামীর ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই ইটভাটা নির্মাণের কাজ বন্ধ করা।
এ সম্পর্কে নির্মাণাধীন ইটভাটার মালিক আব্দুল খালেক বিবার্তাকে বলেন, কাঁশোপাড়া এলাকায় আমার একটি ইটভাটা ছিল। সেই ইটভাটাটি তালপাতিলা শিবনগর এলাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। তবে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিয়েই ইটভাটা চালু করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মলিন মিয়া বিবার্তাকে জানান, তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের কোনো সুযোগ নাই। এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাই নাই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আনজুমান বানু বিবার্তাকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। প্রকৃতপক্ষে ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা হলে কোনোভাবেই অনুমোদন দেওয়া হবে না।
বিবার্তা/শামীনূর/রোমেল/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]