
‘নদীপাড়ে বসবাস করি-কোন রকম খেয়ে ধেয়ে বাঁচতে চাই। প্রতিবারে ঘূর্ণিঝড় খবর শুনলে আতঙ্কে থাকি। ঘূর্ণিঝড় রেমাল আমাদের জায়গা জমি সব এ নদীতে ভেসে গেছে বলেন নদী তীরবর্তী বসবাসকারী রামচন্দ্র ব্যপারি। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার কঁচা, বলেশ্বর ও পানকুচি নদীর উপকূলের বাসিন্দারা।
সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান ও সিত্রাং এর পর সম্প্রতি ঘটিয়ে গেলো সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড় রেমাল। উপকূলীয় মানুষসহ আতঙ্কে থাকতে হয় নদী পাড়ে স্থাপিত মুজিববর্ষ আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের ।
ইন্দুরকানী উপজেলাটি তিন দিক থেকে নদী বেষ্টিত। কিন্তু নদী তীরবর্তী অধিকাংশ এলাকায় টেকসই বেড়ি বাঁধ না থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। ফসলের ক্ষতিসহ নানামুখী ভোগান্তিতে রয়েছে তারা।
ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে এই উপজেলাটি চরম বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছিল ২০০৭ সালে। তখন উপজেলায় প্রাণহানি ঘটে ৭৫ জন শিশু সহ নারী পুরুষ । নিখোঁজের সংখ্যাও কম ছিল না। তখনই নদী তীরের সকল বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। তারপর থেকে নামে মাত্র সংস্কার হলেও তা সমস্যার সমাধান করতে পারে নাই।
ঠিক ১৭ বছর পরে আবারও ঘটে গেল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। যার তাণ্ডবে একজনের প্রাণহানি ঘটে এবং উপজেলার ৯৫ থেকে ৯৭% মানুষের ঘরবাড়ি, গাছপালা, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট, কৃষিক্ষেতসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ইন্দুরকানী উপজেলায় সামান্য জোয়ারে লোকালয় পানিতে প্লাবিত হয়। ডুবে যায় ফসলের ক্ষেত। আবার লবণাক্ত পানিও জোয়ারের সাথে প্রবেশ করে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। জোয়ারের পানির সাথে ভেসে আসা কচুরিপানা জমে যায় ফসলের ক্ষেতে। ডুবে যায় যাতায়াতের পথ। পানির চাপে ভেঙ্গে যায় বসতঘরের মাটির তৈরি মেঝে। ভেসে যায় মাছের ঘের। স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীদের বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাওয়া। সব মিলিয়ে বেড়িবাঁধ সংকটে দিশেহারা স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ইন্দুরকানী উপজেলার কঁচা, বলেশ্বর ও পানকুচি নদীর উপকূলবর্তী লাহুরী, বাড়ৈখালী, টগড়া, পাড়েরহাট, উমেদপুর, চাড়াখালী, ইন্দুরকানী, কালাইয়া, সাঈদখালী, ঢেপসাবুনিয়া, বালিপাড়া, চন্ডিপুর, খোলপটুয়া, চরবলেশ্বর, সন্যাসী এলাকায় প্রায় দুই লাখেরও বেশী মানুষের বসবাস। ঝড় এলেই তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত হন তারা। রেমালের তাণ্ডবে পর থেকে ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। উপকূল জুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের দাবি টেকসই উঁচু বাঁধের।
উপকূলের বাসিন্দারা আ. হক বলেন, আমরা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যেতে পারি। আমরা নিজেদের রক্ষা করলেও বসতঘর, ফসলি জমি, গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমরা এখন পথে বসতে চলছি।
সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাসুদ করিম তালুকদার ইমন জানান, আমাদের ইউনিয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে টেকসই বেড়িবাঁধ, এটা এখন ইন্দুরকানী মানুষের প্রাণের দাবি ।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন জানান, টেকসই বেড়িবাঁধ এর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে এই উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টেকসই এবং উঁচু বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে এলাকায় পানিবন্দিতে থাকতে হয় । তাই এ বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে ।
বিবার্তা/শামীম/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]