শিরোনাম
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খাজা: মুখে আছে কাগজে নেই
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০১৭, ১৪:৪৮
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খাজা: মুখে আছে কাগজে নেই
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খাজা আব্দুস ছাত্তার। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মৌখিক স্বীকৃতি মিললেও স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও কাগজে কলমে কোনো মূল্যায়ন নেই তার। তাই বাবাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন তার একমাত্র মেয়ে। খাজা আব্দুস ছাত্তার নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার শালবাড়ী গ্রামের মৃত খাজা ফয়েজ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে।


জানা গেছে, ১৯৭১ সালে খাজা আব্দুস ছাত্তার খুলনা জেলার খালিশপুরে পিপলস জুট মিলে শিপিং ক্লার্ক পদে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া ওই মিলে শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। সেসময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করে একত্রিত করে ট্রেনিংয়ে পাঠানোর কাজ করতেন। সেখানে স্ত্রী ও ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টি স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে জানতে পারে পাক-বাহিনী।


৭১’ সালের ২৭ এপ্রিল এই অপরাধে পাক হানাদার বাহিনী খাজাকে স্বপরিবারে হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে ৯ বছরের বড় মেয়ে সুরাইয়া বেগম বেঁচে যান। তখন সে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার চাকরাইল গ্রামে নানা ক্যাপ্টেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরীর (সাবেক সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেনের বাবা) বাড়িতে ছিলেন।


স্বপরিবারে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহতের পর সুরাইয়া বেগম নানার বাড়িতে খালা মমতাজ বেগমের কাছে বড় হতে থাকেন। এক পর্যায়ে একই গ্রামের মোকারম হোসেনের সাথে বিয়ে হয়ে সংসার জীবন শুরু করেন। বর্তমানে সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে শামিম উর রহমান বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরিরত এবং মেয়ে মাসুমা বিয়ে হয়েছে।


১৯৮১ সালে ৬ এপ্রিলে শহীদ খাজা আব্দুস ছাত্তারের মেয়ের জামাই মোকারম হোসেনকে পিপলস জুট মিলে কর্মসংস্থানের জন্য সুপারিশ করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বদলগাছী থানা ডেপুটি কমান্ডার আবু ওবায়দা চৌধূরী। সুপারিশের পর পাটকলের শ্রমিক নেতাদের টাকা দিতে না পারায় চাকরি হয়নি। অনেক চেষ্টার পরও শ্বশুরের নাম মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় উঠাতে পারেননি জামাই মোকারম হোসেন।


শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খাজা আব্দুস ছাত্তার স্মরণে ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর হাট-শালবাড়ী-বয়ড়া-বালুভরা ইউপি সড়ক উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম।


বড় মেয়ে সুরাইয়া বেগম তার বাবার কর্মস্থলের এক সহকর্মী আব্দুল মজিদের বরাদ দিয়ে বলেন, বাবা শ্রমিকদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে যেই মাত্র বাড়িতে এসেছেন। এমন সময় পাক হানাদার বাহিনীরা এসে ছোট দুই বোনকে দেয়ালে আছাড় দিয়ে, মা’কে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং বাবাকে জবাই করে হত্যা করা হয়। আমার বাবা দেশের জন্য কাজ করে শহীদ হয়েছেন। আমার বাবাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি এবং মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য দাবি জানাই।


জামাতা মোকারম হোসেন বলেন, সুপারিশ নিয়ে পাটকলে যাওয়ার পর অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। সেখানকার শ্রমিক নেতারা টাকা চেয়ে বসেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আর চাকরি হয়নি। তারপর থেকে আর সেখানে যোগাযোগ করা হয়ে উঠেনি।


মহাদেবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহসিন আলী বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খাজা আব্দুস ছাত্তার নামে একটি সড়কে ফলক উন্মোচন করা হয়েছে। তবে আমাদের উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম নেই।


বিবার্তা/নয়ন/পলাশ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com