শিরোনাম
তাপ-লবণ সহিষ্ণু আলু, মাটি ছাড়া তরমুজ চাষে সাফল্য
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০১৭, ১৭:০২
তাপ-লবণ সহিষ্ণু আলু, মাটি ছাড়া তরমুজ চাষে সাফল্য
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

অধিক তাপ ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু বারি-৭২ জাতের আলু উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র। এ আলু এবার মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদ করে সফলতাও পাওয়া গেছে।

 

পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, পটুয়াখালী ও বরগুনার উপকূল অঞ্চলের চাষিরা ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল (সাধারণ) জাতের আলু বেশি চাষ করে থাকেন। এসব আলুর বীজ বপন করতে হয় নভেম্বরের মধ্যে। কিন্তু বারি ৭২ বপন করা যাবে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। সাধারণ জাতের আলু যেমন স্বাভাবিক নিয়মে চাষ করে ৮৫ দিনের মধ্যে তোলা সম্ভব, এ আলুও একই খরচে একইভাবে ৮৫ দিনের মধ্যে তোলা সম্ভব।

 

তিনি আরো বলেন, সাধারণ আলুর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টন হলেও বারি ৭২ জাতের এই আলুর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৫০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাশাপাশি এ জাতের আলুর বহুগুণের মধ্যে একটি বড় গুণ হচ্ছে- অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও লবণ চাষাবাদে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে না। আলুর এ জাতটি এরই মধ্যে উপকূলীয় চাষিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আগামীতে গোটা উপকূল জুড়ে বারি ৭২ জাতের আলুর ব্যাপক চাষ শুরু হবে বলে আশা করা যায়।

 

গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার জানান, প্রান্তিক চাষিদের লাভবান করতেই গবেষণার ফল হিসেবে বারি ৭২ জাতের আলুর বীজ দিয়ে তাদের চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চলতি বছর ২০ জন কৃষক ২০০ শতাংশ জমিতে বারি ৭২ জাতের আলু চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন।

 

প্রথম বছরের এ ফলনের পর বারির গবেষক গাজীপুরস্থ কন্দাল ফসল গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র কুন্ডু, পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফতেখার মাহমুদ ও রেজাউল করিম মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন।

 

এদিকে, মাটিবিহীন চাষ পদ্ধতি (হাইড্রোপনিক পদ্ধতি) নিয়ে দেশে আগে থেকেই গবেষণা চলছে। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে টমেটো, করলা, কাঁচামরিচ, ক্যাপসিকাম প্রভৃতি চাষের সাফল্যের পর সে ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানীরা হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজের সফল আবাদ করছেন।  

 

কৃষিবিজ্ঞানী মো. রেজাউল করিম জানান, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই প্লাস্টিকের পাইপে নির্দিষ্ট পরিমাণের কম্পোজিশনযুক্ত পানিতে অল্প জায়গায়, স্বল্প শ্রম ও খরচে সারাবছর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। বিশেষ করে এ পদ্ধতিতে বরিশাল, রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ শহর অঞ্চলে যেখানে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে সেসব স্থানে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

 

তিনি আরো বলেন, শহর ও নগরকেন্দ্রিক জীবনে বাড়ির আঙিনায় কিংবা ছাদের বাগানে মাটি তুলতে হয়, শ্রম দিতে হয়। এই পদ্ধতিতে মাটি তোলার ঝামেলা নেই। পাশাপাশি আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না, অনাবাদি জমিও চাষের আওতায় আনা যায়। আলাদাভাবে সার ও সেচের প্রয়োজন নেই। শুধু প্লাস্টিকের পাইপ ও একটি টাইমারসহ মোটরের প্রয়োজন হয়।

 

রেজাউল করিম বলেন, চারা একবার লাগানোর পর তা বছরের পর বছর থেকে যায়। মাটিতে বীজ বপনের আগে ক্ষেত পরিচর্যার মতো খরচের বালাই নেই। পাশাপাশি ক্ষেতের জায়গাটি প্রটেক্টেড হওয়ায় ফসলের রোগবালাইয়ের ঝামেলাও নেই। দেশের মধ্যে গাজীপুরে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের গবেষণা আগে থেকে চললেও পটুয়াখালীতে গত বছরই শুরু হয়। টমেটো, করলা, ক্যাপসিকাম চাষের পর পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রে চলতি বছরই পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজের আবাদ করেন তারা।  

 

উদ্যানতত্ত্ব কেন্দ্রে ২০ ফুট দীর্ঘ, ১০ ফুট প্রস্থের তরমুজ বাগানটিতে ১০টি প্লাস্টিকের পাইপে ছিদ্র করে ১৪০টি বিদেশি জাতের (হাইব্রিড) দুই ধরনের তরমুজের চারা রোপণ করা হয়। স্বাভাবিক নিয়মে ফলন এসে গাছে ঝুলেই বড় হয়েছে তরমুজ। বড়জাতের তরমুজ (১-দেড় কেজি) গাছে ১টি ও ছোট জাতের (৬০০-৯০০ গ্রাম) দুটি করে তরমুজ হয়েছে গাছগুলোতে।  

 

কৃষিবিজ্ঞানী রেজাউল করিম আরো জানান, আগস্টে স্থানীয় বাজার থেকে তরমুজ বীজ কিনে কেন্দে চারা করেছেন। চারার বয়স এক সপ্তাহ হওয়ার পর সেগুলো সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাগানের প্লাস্টিকের পাইপে রোপণ করেন। একইভাবে দ্বিতীয় দফায় জানুয়ারির প্রথমার্ধে চারা রোপণ করেছেন। চারা যাতে না নড়ে সেজন্য ফোম দিয়ে দিয়েছেন। এরপর টাইমার দিয়ে একটি পাম্পপ চালিয়েছেন, যা ১০ মিনিট করে দিনে ১২ বার চলে। এর মাধ্যমে পাইপের পানিতে প্রবাহ আনা হয়, উপচে পড়া পানি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে জমা হয়।

 

চারা রোপণের পর উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় ১৬টি উপাদান, যেমন পটাশিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, ইডিটিএ আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট, বোরিক এসিড, কপার সালফেট, অ্যামোনিয়াম মলিবডেট ও জিংক সালফেট বিশুদ্ধ পানিতে মিশিয়ে ওই পাইপে নিয়মিত সরবরাহ করা হয়। যা স্বল্প খরচে পাওয়া যায়। বাষ্প হওয়া ছাড়া এই কম্পোজিশন মিশ্রিত পানির কোনো অপচয় হয় না।

 

তরমুজের জীবনকাল ৭০-৮০ দিন, করলার ৮০ দিন, ক্যাপসিকামের ৫০-৬০ দিন, বারি-১৪ টমেটোর ১০০ দিন। নির্দিষ্ট জীবনকালের মধ্যেই হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে এগুলোর ফসল সংগ্রহ করা হয়েছে।

 

পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার জানান, ১৮ বর্গ মিটার জায়গায় আধুনিক এ ক্ষেত তৈরিতে পাইপ, পাম্প, মিটারসহ খরচ পড়বে ২৭ হাজার ৯০০ টাকা। এরপর প্রতি বছর খরচ পড়বে মাত্র এক হাজার টাকা। তাদের এক সিজনে (৩ মাসে) চারা রোপণ ও উপাদান খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। আয় হয়েছে ১৬ হাজার টাকা।

 

বিবার্তা/আছিয়া/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com