পা দিয়ে লিখে পাশ করেছে অদম্য শিক্ষার্থী সিয়াম
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ১৫:৩৪
পা দিয়ে লিখে পাশ করেছে অদম্য শিক্ষার্থী সিয়াম
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দুই হাত না থাকলেও বন্ধ হয়নি লেখাপড়া। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা। বলছি জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মেধাবী শিক্ষার্থী সিয়ামের কথা। অভাব, দারিদ্র ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মেধাবী এই শিক্ষার্থী সিয়াম। তার প্রাপ্ত নাম্বার জিপিএ ৩.৮৩। লেখাপড়া করে হতে চায় সরকারি চাকরিজীবি।


পরিবার, এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর দম্পতি জিন্নাহ মিয়ার ছেলে সিয়াম। তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম সবার ছোট। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত না থাকলেও প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তার লেখাপড়া ও খেলাধুলা। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ। প্রতিবেশি শিশুদের সাথে গিয়ে বসে থাকতেন তাদের স্কুলে।


তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে বিভিন্ন অক্ষরের ওপর পা দিয়ে চক পেন্সিলে ঘষামাজা করে লেখা শেখান মানবিক শিক্ষিকা জাকিয়া সুলতানা। সেখান থেকেই লেখার অভ্যাস শুরু হয় সিয়ামের। পরবর্তীতে অভ্যাসের সাথে নিজের বাম পা দিয়ে লেখার ধারাবাহিকতায় শুরু করে পড়াশোনা। ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুল থেকে অংশগ্রহণ করে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে সিয়াম। এরপর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল এন্ড কলেজে। সেখান থেকেই জেএসসি পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফল করে বর্তমানে দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগ থেকে এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে সিয়াম।


দুই হাত না থাকলেও খেলতে পারেন ক্রিকেট খেলা, পারেন পুকুরে সাঁতার কাটতে, নিজেই পা দিয়ে টিউবওয়েল চেপে পানি তুলে গোসল করে, পা দিয়ে চামচ ধরে ভাত মাখিয়ে খায় সিয়াম। বই খোলা ও পাতা উল্টানো, মোবাইল চালানোসহ সকল কাজ পা দিয়েই করে অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থী।


সিয়ামের বাবা জিন্নাহ মিয়া ও মা জোসনা বেগম বলেন, সিয়ামের ছোট থেকেই স্কুলে যাওয়া, পড়ালেখা করার ইচ্ছে ছিলো। ছোট বেলায় ওর বয়সীরা স্কুলে গেলে ওদের সাথে আমাদের না বলে চলে যেত। তারপর ওর স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ দেখে আমরা ব্যাক স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করা। ও সেটা করছে। এখন সিয়াম এসএসসি পরিক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। আমরা খুব খুশি। তবে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে আমরা ওকে লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে পারি না। এখন কোথাও ভর্তি করাতে পারবো কি না জানি না।


সিয়াম বলেন, আমার আজকে এই পর্যন্ত আসার পেছনে সব থেকে বড় অবদান জাকিয়া সুলতানা ম্যাডামের। যিনি আমাকে পড়ালেখা করার সাহস জুগিয়ে পা দিয়ে আমাকে লেখা শিখিয়েছেন। আমার স্কুলের বন্ধুরা যারা সব সময় আমাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছে। কখনো বুঝতে দেয়নি যে আমি প্রতিবন্ধী। তাদের জন্যই আমি আজকে সফল। আমার ইচ্ছে পড়ালেখা শেষ করে সরকারি চাকরি করব। মা বাবার মুখে হাসি ফোটাব, দেশের মানুষের সেবা করব।


সিয়ামের শিক্ষক ও চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, সিয়াম আমাদের এখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বিনা বেতনে তাকে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছি। সে যদি আমাদের এখানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় তাহলে তাকে বিনা বেতনে পড়ানো হবে।


বিবার্তা/মনির/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com