শিরোনাম
মণিরামপুরে গরিবের চাল ধনীর ঘরে
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০১৬, ২৩:০৪
মণিরামপুরে গরিবের চাল ধনীর ঘরে
এইচ আর তুহিন, যশোর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় কতিপয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতিতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে হতদরিদ্রদের জন্য নেয়া সরকারের বিশেষ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি। হতদরিদ্রদের জায়গায় স্থান পেয়েছে ধনীরা। এমনকি ইউপি সদস্য ও তার স্ত্রী পাচ্ছেন ১০টাকা কেজি দরের এই চাল।


চাল বিতরণে ওজনে কম দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে এসব অভিযোগে ডিলারশিপ বাতিলসহ জরিমানাও করা হয়েছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের বিশেষ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় ২৩ হাজার ৪১৯ জনের তালিকা করা হয়েছে। যে তালিকায় অনেক ধনী লোকের নাম থাকলেও ভিক্ষুকও তালিকায় ঠাঁই পায়নি। কার্ড প্রাপ্তদের মধ্যে অনেকের আছে পাকা বাড়ি ও মাছের ঘেরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।


স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সদর ইউনিয়নের সদস্য আনোয়ার মোল্যা ও তার স্ত্রী তাসলিমা, ইউপি সদস্যের ভাই আড়ৎ ব্যবসায়ী আহাদ মোল্যা ও তার ছেলে রাসেল, ভাই আজগর মোল্যা, ভাইজি ময়না খাতুন ১০ টাকা চালের কার্ড বাগিয়ে নিয়েছেন।


উপজেলার পদ্মনাথপুর গ্রামের আবুবক্কার সরদারের ছেলে শহিদুল সরদার, মিকাইলের ছেলে আতর আলী, আব্দুল মজিদ সরদারের ছেলে আশরাফ আলী সরদার, আফসার আলী সরদারের ছেলে শুকুর আলী, রাজআলী, উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে ইনামুল, লাল বিশ্বাস, মৃত হাকিমের ছেলে আমান উল্লাহ, মকছেদের ছেলে ওলিয়ার, তকবার মোড়লের ছেলে নজরুল ইসলামসহ অধিকাংশ কার্ডধারীদের আছে পাকা বাড়ি, মাছের ঘের ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অথচ ভূমিহীন, পরের বাড়িতে বসবাস করেন- এমন অনেকেরই ঠাঁই হয়নি তালিকায়। জয়পুর গ্রামের মৃত মতলেবের ছেলে হতদরিদ্র সিদ্দিক, গাবুখালি গ্রামের গাজী পাড়ার ভিক্ষুক রুপি বেগম , সুরেন্দ্রনাথ পালের ছেলে ভ্যান চালক অরুণ পাল, অনিমা পাল স্বামী খোকন পাল, রহিম গাজী, হালিম বিশ্বাসসহ অনেকেরই তালিকায় নাম ওঠেনি।


হতদরিদ্র বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মেম্বরদের হাতে-পায়ে ধরেও কার্ড পাইনি। আবার অনেক ইউনিয়নে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে যারা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে নৌকার সমর্থক হতদরিদ্রদের তালিকায় ঠাঁই না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে হেরে যান আবুল ইসলাম।


তিনি অভিযোগ করেন, নৌকায় ভোট দেয়ায় দরিদ্র অসহায় মানুষককে তালিকায় ঠাঁই দেয়নি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার।তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ।


এদিকে, ডিলারদের বিরুদ্ধে ওজনে কম দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১১ অক্টোবর সদর ইউনিয়নের ডিলার শহিদুল ইসলাম শাহিনকে হাতে-নাতে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ১৭ অক্টোবর উপজেলা ফেয়ার প্রাইজ কার্যক্রম কমিটির জরুরি সভায় তার ডিলারশিপ বাতিল করা হয়।


এসব বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা ফেয়ার প্রাইজ কার্যক্রম কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, অনিয়ম হলে রক্ষা নেই। জেল জরিমানাসহ ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।


এ বিষয়ে মণিরামপুরের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের বিশেষ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে কোনো অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। যে অনিয়ম করার চেষ্টা করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তা তিনি যত বড় ক্ষমতাধর লোক হন না কেন।


তিনি আরও বলেন, সরকার হতদরিদ্রের জন্যই এই কর্মসূচি চালু করেছে, বিত্তবানদের জন্য নয়।


বিবর্তা/তুহিন/মনোজ/রয়েল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com