
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডাস্থ তিনশত বছরের প্রাচীন মন্দির শ্রী শ্রী কাল ভৈরব মন্দিরে ছয় দিনব্যাপী বার্ষিক রুদ্র চন্ডি মহাযজ্ঞ মহোৎসব শুরু হয়েছে।
১৬ মার্চ, শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বৈদিক পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে চারদিন ব্যাপী মহাযজ্ঞ এবং মোট ছয়দিন ব্যাপী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
উদ্বোধন করেন মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী পলাশ ভট্টাচার্য। এসময় বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পুরোহিত পণ্ডিতগণ সহ স্থানীয় ভক্তবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় জীব জগতের কল্যাণ কামনায় সপ্তশতী চন্ডীযজ্ঞ শুরু হয়।
চন্ডীযজ্ঞ অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই দেশ বিদেশের ভক্তবৃন্দরা যজ্ঞের আহুতি হিসেবে ঘি, ফুল, ফল, দূর্বা, বেলপাতা সহ বিভিন্ন পূজার সামগ্রী নিয়ে অংশ গ্রহণ করেন।
সিলেট থেকে মন্দিরে আসা মিতা চক্রবর্তী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুমা বণিক জানান, কালভৈরব বাবার মন্দিরে প্রতি বছরই আসি। এসে নিজের জন্যে, পরিবারের জন্যে এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্যে প্রার্থনা করি। দেশ ভাল থাকলে আমরা ভাল থাকবো। তাই সকলের জন্যে প্রার্থনা করেছি।
শ্রীশ্রী কাল ভৈরব মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী পলাশ ভট্টাচার্য জানান, আজ থেকে ৩শ বছর পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ফুলবাড়ীয় গ্রামের দূর্গাচরন আচার্য্য স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে শহরের মেড্ডা এলাকায় তিতাস নদীর তীরে শ্রীশ্রী কালভৈরব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে জীব জগতের কল্যাণ কামনায় প্রতিবছর এই যজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। মাঝখানে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী মন্দিরটিকে ডিনা মাইটের মাধ্যমে ক্ষতি সাধন করেছিলেন, পরে ড.মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর প্রচেষ্টায় ভক্তরা মন্দিরটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
যজ্ঞ অনুষ্ঠানের হবিগঞ্জ থেকে আগত পণ্ডিত ও পুরোহিত মধুসূদন চক্রবর্তী জানান, প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানে সকলের মঙ্গলকামনায় ভক্তরা ভারত-নেপাল সহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসে সমবেত হন।
জীব জগতের কল্যাণ কামনায় এই যজ্ঞের মধ্যদিয়ে মানুষের মনের বাসনা পূর্ণ হয়। এছাড়া এই যজ্ঞ অনুষ্ঠানে দেশের মানুষের সুখ সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে আগত পুরোহিত অনুপম ভট্টাচার্য জানান, রুদ্র চন্ডি মায়ের কাছে প্রার্থনা একটাই, সারাবিশ্বে যেন শান্তি বর্ষিত হয়। সব জায়গায় যেন শান্তি স্বস্তিতে ভরে ওঠে এ জন্যে মহাকাশের কাছে প্রার্থনা। বায়ুর কাছে প্রার্থনা। পঞ্চ ভূত এর কাছে প্রার্থনা। এই ধরিত্রী বুকে যেন শান্তি স্বস্তি বিরাজ করে।
কোথাও যেন হানাহানি না থাকে। মানুষের মানুষের বিভেদ যেন না থাকে। সকল স্থানে যেন শান্তি স্বস্তি আনন্দ বিরাজ করে এমনটাই প্রার্থনা করেন তিনি।
ছয়দিন ব্যাপী বার্ষিক এই উৎসবে প্রতিদিন শ্রী মৎ ভগবৎ গীতাপাঠ সহ ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আগামী মঙ্গলবার থেকে অষ্টপ্রহর ব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন শুরু হবে।
আগামী বৃহস্পতিবার সকালে শেষ হবে ছয়দিন ব্যাপী উৎসব। সপ্তাহ ব্যাপী উৎসবকে কেন্দ্র করে মন্দির প্রাঙ্গণে বসেছে লৌকজ মেলা।
বিবার্তা/আকঞ্জি/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]