শিরোনাম
ভদ্রা পার্কে দুষ্কর্মের আসর
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০১৭, ১০:৫৬
ভদ্রা পার্কে দুষ্কর্মের আসর
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরছে না। পর্যাপ্ত গাছ থাকায় রোদেরও উত্তাপ নেই। তারপরেও ছাতা। ছাতার নিচে এক জোড়া তরুণ-তরুণী। চলছে অশ্লীলতা। ১৭ মার্চ বিকেলে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্কে গিয়ে ছাতার নিচে এমন বেশকিছু তরুণ-তরুণীকেই দেখা গেল।


স্থানীয়রা জানালেন, শুধু ওই দিনই নয়, এ দৃশ্য প্রতিদিনের। সকাল-দুপুর-বিকেল সব সময়ই এ চিত্র দেখা যায় পার্কের ভেতর। রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা এলাকার এ পার্কটি ‘ভদ্রা পার্ক’ নামেই পরিচিত। জাতীয় চার নেতার একজনের নামে এই পার্কটির ভেতর এমন অশ্লীলতা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


স্থানীয়রা বলছেন, পার্কটিতে এখন আর অন্য কেউ যান না। যারা এসব দুষ্কর্মের আসর বসান, কেবল তারাই যান। পাশাপাশি দেয়াল টপকে ঢোকে মাদকসেবীরা। পার্কে পুলিশ যায় না, তাই সেখানকার নিরিবিলি পরিবেশে নিরাপদে চলে মাদকসেবন। কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকায় পার্কটি এখন বেহাল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। শুধু তাই নয়, পার্কটির নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের দিকে এই পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৯৬ সালের দিকে এর উদ্বোধন হয়। মোট জমির পরিমাণ ৩৮ বিঘা। পার্কটির দুটি অংশ। একটি ‘বড়দের’ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্ক, আর তার পাশেই ‘ছোটদের’ ইকো পার্ক। দুটি পার্কই রক্ষণাবেক্ষণ করে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)।



তবে ইকোপার্কটি ইজারা দেয়া আছে। আর মনসুর আলী পার্কটি আরডিএ নিজেই চালায়। এই পার্কটিতেই চলে অশ্লীলতা, চলে মাদকসেবন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পার্কের অশ্লীলতার কারণে তারা বহুতল ফ্ল্যাটের জানালা সব সময় বন্ধ রাখেন। জানালা খুললেই পার্কের ভেতরের অশ্লীলতা চোখে পড়ে। আর নিচু দেয়াল টপকে পার্কের ভেতর ঢুকে অবাধে মাদকসেবন করে মাদকসেবীরা। এসব অপকর্মে পার্কের দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরাই সহায়তা করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।


১৭ মার্চ পার্কটিতে গিয়ে এখানে-সেখানে ঝোপঝাড়ের আড়ালে বেসামাল তরুণ-তরুণীদের অশ্লীলতা চোখে পড়ে। দেয়াল ঘেঁষে বসে কয়েকজন যুবককে মাদকসেবন করতেও দেখা যায়। ক্যামেরা দেখে এনামুল হক নামে পার্কের এক নিরাপত্তা কর্মী এগিয়ে এসে বলেন, ক্যামেরা আছে ভালো। কোনো ছেলে-মেয়ের ছবি তুলবেন না।


নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা সদরের মুজাহিদুল ইসলাম (৩০) একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। ভদ্রা এলাকায় সংস্থাটির কার্যালয়ে এসেছেন তিনি। ওই দিন বিকেলে কিছুটা সময় কাটাতেই ঢোকেন এই পার্কে। তিনি বলেন, ভাবলাম সময়টা কাটবে, একটু ঘুরে আসি। এসে লজ্জায় মরি! এমন বেহাল অবস্থা আগে জানলে ঢুকতাম না।


শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্কের দেয়ালের ওপাশেই ইকোপার্ক। এই পার্কটি ইজারা দেয়া। দীর্ঘদিন ধরেই পার্কটি চালান জিয়াউর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, গত বছরই পার্কটিতে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় করে শিশুদের নানা রাইডার কিনেছেন তিনি। এখন পাশের পার্কটির ‘বদনামের’ কারণে তার পার্কেও দর্শনার্থী আসেন না। দিনে বড়জোর এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয় এই পার্ক থেকে। এখন তারা পার্কটি বন্ধের বিষয়ে ভাবছেন।


১৭ মার্চ ছিল শিশু দিবস। ছিল শুক্রবারও। তাই ইকোপার্কটিতে নিজের ছোট বাচ্চাকে নিয়ে গিয়েছিলেন নগরীর ধরমপুর এলাকার গৃহবধূ তানিমা খাতুন। তিনি বলেন, বাচ্চা আসতে চায় বলে এসেছি। এসে দেখছি আমরাই একা, আর কেউ নেই। অন্য বাচ্চাদের না পেলে নিজের বাচ্চাটা মন খারাপ করে। একজন বাচ্চার জন্য রাইডারগুলোও কর্তৃপক্ষ চালাতে চায় না। এ অবস্থার জন্য দায়ি পাশের পার্ক।



শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্কের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কটির কার্য সহকারী সত্য নারায়ণ স্যান্যাল বলেন, এই পার্কে বিনোদনের জন্য কিছু নেই। শুধু আছে গাছের ছায়া। তাই এখানে বসার জন্য শুধু তরুণ-তরুণীরাই আসে। এ কারণে অন্য বয়সী কোনো দর্শনার্থী আসেন না। শুধু তরুণ-তরুণীরা আসে বলেই দিনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয়।


সত্য নারায়ণ বলেন, অনেকেই পার্কে অশ্লীল কার্যকলাপে লিপ্ত হতে চেষ্টা করে। পশ্চিম দিকের দেয়ালটি নিচু হওয়ায় অনেকেই আবার তা টপকে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকি। আমাদের প্রহরীরা লাঠি নিয়ে পার্কের ভেতর ঘোরাফেরা করেন। মাদকসেবী দেখলেই কিংবা কেউ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হলেই পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেয়া হয়।


পার্কটির ব্যাপারে কথা বলতে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলারঞ্জন দাশকে টেলিফোন করা হয়। তবে এই বিষয় নিয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।


বিবার্তা/রিমন/জেমি/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com