শিরোনাম
সন্ধ্যায় শুরু হচ্ছে খেতুরীধামে মহোৎসব
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:০২
সন্ধ্যায় শুরু হচ্ছে খেতুরীধামে মহোৎসব
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার খেতুর গ্রামে শুরু হচ্ছে ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী খেতুরীধাম মহোৎসব। বুধবার সন্ধ্যায় শুভ অধিবাসের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তবে এরই মধ্যে ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে খেতুরীধাম।


এরই মধ্যে ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে খেতুরীধাম। বৃহস্পতিবার অরুণোদয় থেকে অষ্ট প্রহরব্যাপী চলবে সেখানে তারক ব্রক্ষ্মনাম সংকীর্ত্তন। শুক্রবার প্রথম প্রহরে দধিমঙ্গল, দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি হবে।


এই উৎসবকে ঘিরে প্রতি বছর দুই বাংলার লাখো ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে গৌরাঙ্গবাড়ি মন্দিরের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মালম্বীদের এটিই সবচেয়ে বড় জমায়েত। উৎসব সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে খেতুরীধাম ট্রাস্টিবোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ নেওয়াজ জানান, এবারের উৎসবকে ঘিরে পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে আয়োজিত মেলা নির্বিঘ্ন করতে মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকশ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক।


গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সী জানান, খেতুরীধাম ও মেলাকে ঘিরে ওই এলাকায় যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। সেখানে তিন স্তরে ৩০৫ জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। খোলা হয়েছে দুটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম। বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া মাঠে রয়েছেন র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।


এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, মেলা এলাকায় ২৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। আগত ভক্তরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা দেবে এই মেডিক্যাল টিম।


গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্টি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক শ্যামাপদ স্যানাল বলেন, সারা পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের মোট ছয়টি ধাম রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই ভারতবর্ষে। আর একটি মাত্র বাংলাদেশে। আর তা এই খেতুরীধাম। এ কারণে প্রতিবছর উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ ভারত, নেপাল ও মায়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক লাখো ভক্তের আগমন ঘটে। এবার ভক্তের সংখ্যা সাত লাখ ছাড়িয়ে যাবে।


নরোত্তম ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে জানা যায়, ১৫৩১ খ্রিষ্টাব্দে ঠাকুর নরোত্তম দাস গোদাগাড়ি উপজেলার পদ্মা তীরের গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জমিদার কৃষ্ণনন্দ দাস, মা নারায়নী রাণী। গোপলপুরে শৈশব অতিবাহিত করে ঠাকুর নরোত্তম দাস বৃন্দাবন অভিমুখে যাত্রা করেন। সেখানে নিখিল বৈষ্ণবকুল লোকনাথ গোস্বামীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা লাভ করেন।


পরে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। খেতুর গ্রামে তিনি মন্দির গড়ে তোলেন। এরপর তিনিই প্রথমে এখানে এ উৎসবের আয়োজন করেন। ভক্তরা দূর-দূরান্ত থেকে তার কাছে এসে দীক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেন।


১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে কার্তিকী কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে নরোত্তম দাস গঙ্গাস্নানের বাসনা প্রকাশ করেন। শিষ্যরা তাকে গঙ্গাজলে নিয়ে গেলে দুই শিষ্য গঙ্গানারায়ণ ও রামকৃষ্ণকে আদেশ করেন তার দেহ মার্জন করতে। গুরু আজ্ঞায় নরোত্তমের ওই দুই শিষ্য দেহ মার্জন করতে থাকলে পুরো দেহ এক সময় সাদা দুধের মতো তরল পদার্থে পরিণত হয়ে গঙ্গাজলে মিশে যায়।


সে অনুযায়ী ঠাকুর নরোত্তম দাস পৃথিবীতে ৮০ বছর স্থায়ী ছিলেন। এরপর থেকেই দুর্গাপূজার পর বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা অহিংসার এই মহান সাধকের কৃপা লাভের আশায় খেতুরীধামে বছরে একবার মিলিত হয়ে থাকেন।


বিবার্তা/রিমন/নাজিম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com