চট্টগ্রামে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করা সন্ত্রাসী ‘ব্ল্যাক শামীম’ গ্রেফতার
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:১৬
চট্টগ্রামে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করা সন্ত্রাসী ‘ব্ল্যাক শামীম’ গ্রেফতার
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় নির্বাচনী সংঘর্ষে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি ছোড়া শামীম আজাদ ওরফে ব্ল্যাক শামীমকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার (৮ জানুয়ারি) রাতে সীতাকুণ্ড থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় শামীমের ব্যবহৃত সেই অস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে।


গ্রেফতার শামীম আজাদ মুন্না মিরসরাই থানার সায়েরখালী গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে। বসবাস করেন নগরের খুলশীতে। ছাত্রলীগের রাজনীতি করা স্নাতক পাস শামীম চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পাহাড় কাটা, হুমকি দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের হওয়া অন্তত ৫ মামলার আসামি। ভোটের দিন অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুঁড়ে ফের আলোচনায় আসেন। আবারও গ্রেফতার হয়েছেন র‍্যাবের হাতে। টাকার বিনিময়ে (ভাড়ায় খেটে) এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেন তিনি।


৯ জানুয়ারি, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় র‍্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতার শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিল। শুধু এসব কর্মকাণ্ড নয়, তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন অপরাধের তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। এসব অপকর্মের জন্য তার বিরুদ্ধে এর আগে ৫টির অধিক মামলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাকে ইতোপূর্বে তিনবার গ্রেফতারও করেছে। তিনবারই তিনি জামিনে এসে তার অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। তিনি মূলত ৭ জানুয়ারি পাহাড়তলী এলাকায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত করার জন্য তার নেতৃত্বে আরও কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেন্দ্রের সামনে আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা বা সহিংসতা ঘটান। তিনি ভোটকেন্দ্রের সামনে নিজে বিদেশি পিস্তল দিয়ে প্রতিপক্ষকে এলোপাথারি গুলিবর্ষণ করেন। তার গুলিতেই শান্ত ও জামাল নামে দুজন গুরুতরভাবে আহত হন।


তিনি বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার শামীমের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। সেই মামলায় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। তিনি ঘটনার পর সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে আত্মগোপনে যান। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তার অবস্থান নিশ্চিত করলে তিনি সেটি বুঝতে পেরে অন্য স্থানে আত্মগোপনের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এর আগেই সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।


শামীম কার পক্ষে কাজ করেছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, একজন সন্ত্রাসীর পরিচয় সে একজন সন্ত্রাসী। গ্রেফতার ব্ল্যাক শামীমের পরিচয় সে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজ। সে বিভিন্ন সময় অর্থের বিনিময় ভাড়ায় খেটে বিভিন্ন অপকর্ম করেছে। আমরা তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। সে মূলত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে ভোটের দিন অপকর্ম বা এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছে- এ সংক্রান্ত তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করছি। নির্বাচনের দিন সে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছে এবং দুজনকে গুরুতর আহত করেছে। সেখানে ভিকটিম যে মামলা দায়ের করেছেন সেখানে উল্লেখ আছে, শামীম স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অর্থাৎ ফুলকপি মার্কার প্রার্থীর (মঞ্জুর আলম) পক্ষে কাজ করছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি এবং তদন্ত করছি।


তাকে কিন্তু আমরা ইতোপূর্বে তিনবার আটক করেছি। তিনবারই তিনি কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে এসেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পরিচয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিলেন। এ ঘটনায় আর কেউ তাকে উস্কে দিয়েছিলেন কিনা বা কেউ জড়িত কিনা সে বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আমরা যদি আর কারও সংশ্লিষ্টতা বা মদতদাতা পাই তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।


যে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এটি নির্বাচনের দিন ব্যবহার করা অস্ত্র কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটি অবৈধ অস্ত্র। আমরা যে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করেছি সেটির সাথে নির্বাচনের দিন ব্যবহার করা অস্ত্রের অনেকটা মিল রয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছেন, এটি সেই অস্ত্র নয়। এটা অন্য একটি অস্ত্র। এটি আসামির নিরাপত্তার জন্য তার পাশে রেখেছিলেন। কিন্তু এই অস্ত্র সেই অস্ত্র কিনা, এটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কিছু ফরেনসিক চেক আছে। সেটি করলে আসলে আমরা জানতে পারব ওই অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছিল নাকি অন্য অস্ত্র দিয়ে।


তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা নির্বাচনে সহিংসতা করেছে বা পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছে তারা যে হোক তাদের সকলকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে।


এর আগে, গত ৭ জানুয়ারি খুলশীর পাহাড়তলী কলেজ এলাকায় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালীন সময়ে সকাল সাড়ে ১০টায় পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষকে গুলি ছোড়েন শামীম। আর সেই ঘটনায় শান্ত বড়ুয়া (৩০) ও মো. জামাল (৩২) নামে দুজন গুরুতর আহত হন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামীম আজাদ ওরফে ব্ল্যাক শামীম ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com