রাজধানীর বনশ্রীতে গৃহকর্মী আসমা বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় রামপুরা থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। তবে কোনো মামলায় গৃহকর্মীকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়নি। সোমবার এসব মামলা করা হয়। হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তবে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
দুটি মামলায় এক হাজার থেকে ১২শ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ দুটি মামলার একটিতে সরকারি কাজে বাধা ও হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এবং অন্যটিতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিংসযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। আরেকটি অপমৃত্যু মামলা।
এদিকে সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আসমার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে লাশ নিয়ে স্বজনরা গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে যান।
গত রবিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বনশ্রীর ডি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাড়ির গেটের পাশে আসমার লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত না হলেও পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, আসমা ছয়তলার ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।
মারা যাওয়া গৃহকর্মী আসমার বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার কুকরারায় গ্রামে। দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে কানিজ ফাতেমার মিরপুরের বাসার গৃহকর্মী ছিলেন তিনি। গত শুক্রবার আসমাকে নিয়ে কানিজ ফাতেমা সন্তানসহ বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন।
ভবনটির মালিক দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের দাবি, আসমা আত্মহত্যা করেছেন। তবে আসমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে এলাকাবাসী দেলোয়ারের বাড়িতে হামলা ও গ্যারেজে পার্কিং করা তিনটি প্রাইভেটকার এবং একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের ওপরও হামলা চালানো হয়। এসময় ছয়-সাতজন পুলিশ সদস্যকে বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। এরই মধ্যে বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে তারা। তাদের হামলায় রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমানসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৬টি কাঁদানে গ্যাস ও ৪৫টি শর্টগানের গুলি ছোড়ে। বেলা ১২টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ জানায়, আসমার মৃত্যুর ঘটনায় তার ছেলে আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে রামপুরা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, আসমা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।
অপরদিকে রামপুরা থানার এসআই কামরুল হাসান বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা করেন। এ মামলায় অজ্ঞাত এক হাজার থেকে ১২শ’ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারে বলা হয়েছে, আসমার মৃত্যুর খবর শুনে রামপুরা থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যান। তারা পৌঁছানোর আগেই লোকজন জড়ো হয় সেখানে। এলাকাবাসী আসমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়।
খবর পেয়ে এক হাজার থেকে ১২শ’ মানুষ ওই বাড়ির সামনে জড়ো হয়। পুলিশ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও উত্তেজিত জনতা হত্যার উদ্দেশে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। একইসঙ্গে ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলা ও গ্যারেজে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশের এক সদস্যের মোবাইল ফোনও চুরি করা হয়।
অন্যদিকে প্রাইভেটকার তিনটির মালিক দেলোয়ার হোসেন। গাড়িগুলো ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় করা মামলার বাদি দেলোয়ার হোসেনের চালক উজ্জল মিয়া।
রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যবেক্ষণ চলছে। এরইমধ্যে হামলাকারী কয়েকজনকে শানক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]