মিধিলি’র প্রভাবে দুবলা শুঁটকি পল্লী ও বান্দরবানে শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:২৭
মিধিলি’র প্রভাবে দুবলা শুঁটকি পল্লী ও বান্দরবানে শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি
বাগেরহাট ও বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে বৃষ্টির কারণে সাগরের তীরবর্তী দুবলা শুঁটকি পল্লীর ৩০ থেকে ৩৫ কুইন্টাল শুঁটকি মাছে পচন ধরেছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০/২৫ কোটি টাকা। যা থেকে সরকার রাজস্ব হারাতে পারে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা।


দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর দুবলা জেলে পল্লীতে ১৬ জন বহদ্দার, ৬৪টি ডিপো, ৯৬টি দোকান, ১ হাজার ৩৫টি জেলের থাকার ঘরসহ ১০ থেকে ১১ হাজার জেলে শুঁটকি মৌসুমে দুবলাসহ বিভিন্ন চরে অবস্থান করে।


তিনি আরও জানান, গত ১৫ এবং ১৬ই নভেম্বর লঘুচাপ ও পরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দুবলা জেলে পল্লীর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কুইন্টাল বিভন্ন প্রজাতির মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। আর এতে সরকার রাজস্ব হারাবে ৫০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার রেঞ্জের দুবলাসহ কয়েকটি চর এলাকায় কয়েক হাজার জেলের সমাগম ঘটে। সেখান থেকে তারা কোটি কোটি টাকা শুঁটকি তৈরি করে দেশের বৃহত্তম বাজার চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেয়া হয়। আর এর থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু বছরের শুরুতেই লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ায় বৃষ্টিসহ বাতাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জেলেদের মাছে পচন ধরেছে। এমনকি ২০ থেকে ২৫ কুইন্টাল মাছ পচে যাওয়ায় তা সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দুবলা জেলে পল্লী এলাকায় মোজাফ্ফার বহদ্দারের দুইটি ট্রলার পানিতে ডুবে গেছে। তবে জেলেরা কিনারে উঠতে সক্ষম হয়েছে।


এ বিষয় দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, বছরের শুরুতে শত শত জেলের প্রচুর মাছ পাওয়ায় এ বছর রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র কারণে ৫০ থেকে ৭৫ লাখ টাকার রাজস্ব হারাতে পারে সরকার।


বান্দরবানে শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি


বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে আমন ফসল ও আগাম শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাসে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের আমন ধান, শীতের আগাম সবজি, ফলজ বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাকা ও আধাপাকা ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ার ফলে কৃষকেরা এখন দিশাহারা।


উপজেলার বাইশারী, ইউনিয়নের কৃষক আবুল সামা ও জালাল আহমেদসহ অনেকে জানান, এ বছর শুরুর দিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষাবাদ করে ফলন হয়েছিল অনেক ভালো। কিন্ত ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে অধিকাংশ ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।


উপজেলার ৫ ইউনিয়ন- বাইশারী, সোনাইছড়ি, দৌছড়ি, ঘুমধুম ও সদর ইউনিয়নে সরজমিন কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ নাই। মানুষের বাড়িঘরের ফ্রিজের মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।


সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যানি মারমা জানান, ফসলসহ আগাম সবজি ও বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া কোনো ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া যায় নাই। সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার ইমন জানান, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছ। তবে এলাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেনি।


বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলম কোম্পানি বলেন, আমার এলাকায় আগাম সবজি ক্ষেত, ফলজ বাগান, রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে পাহাড় ধসে কোনো ধরনের ক্ষতি হয়নি।


বাইশারী সদরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার রফিকুল আলম বলেন, তাড়াতাড়ি পাকা ধানগুলো কেটে ফেললে তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনামুল হক জানান, উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগণ বর্তমানে মাঠে রয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। তবে কৃষকদের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। আংশিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র কারণে উপজেলার ৫ ইউনিয়নে কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি, হতাহতের খবরও পাওয়া যায়নি। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আসার আগেই প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছিল।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com