শিরোনাম
মেরাখোলা স্কুলে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণীকক্ষ
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০১৭, ১০:২৯
মেরাখোলা স্কুলে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণীকক্ষ
নুরুল করিম আরমান, লামা
প্রিন্ট অ-অ+

বান্দরবানের লামা উপজেলার মেরাখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণীকক্ষ ও সুযোগ সুবিধা। তিন বছরেও হয়নি শ্রেণীকক্ষ বৃদ্ধি। নিয়োগ করা হয়নি শিক্ষকসহ লোকবল। ফলে পূর্বের শিক্ষক, জনবল ও শ্রেণীকক্ষ দিয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।


এছাড়া বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করার পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এ বিদ্যালয়কে পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করে সরকার।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন এক ইউনিয়নের নাম লামা সদর ইউনিয়ন। তিনদিকে মাতামুহুরী নদীবেষ্টিত হওয়ায় এখানকার কোমলমতি শিশুরা নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে গিয়ে পড়ালেখা করা একেবারেই অসম্ভব বিধায় ১৯৬৫ সালে সরকার ইউনিয়নের মেরাখোলা গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে।


এ বিদ্যালয় ছাড়া প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন বিদ্যালয় নেই। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত সর্বমোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৭৮ জন। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত রয়েছে ৩৩৩জন এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮মশ্রেণী পর্যন্ত রয়েছে ১৪৫ জন শিক্ষার্থী।


চলতি শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীতে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে চাইলেও শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষসহ অন্যান্য সংকটের কারণে শিক্ষার্থী ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর অফিস কার্যক্রম, মাধ্যমিক বোর্ডে যাতায়াত ব্যয়সহ স্টেশনারি ব্যয়ের জন্য সরকারি কোন বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এ বিদ্যালয়ে। তাছাড়া এ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত নেই কোন বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক। প্রাথমিক লেবেলের শিক্ষক দিয়েই চলছে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর কার্যক্রম। নিম্ম মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য আরও ৬জন শিক্ষক দরকার এ বিদ্যালয়ে। ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে প্রাকপ্রাথমিক শ্রেণীকক্ষ সাজানো হয়েছে। এ শ্রেণীতে রয়েছে ২৮জন কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী। গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ইউছুফ আলী বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে পরিবেশ ও পড়ালেখার মান নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা রক্ষায় সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশীষ কুমার দত্ত ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোজাহের কামাল বলেন, ১৯৬৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ৩টি ভবনের মধ্যে ১টি ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে কোনমতে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো গেলেও বর্ষা মৌসুমে পুরনো ভবনের ছাঁদ ছুঁইয়ে পানি পড়ার কারণে শ্রেণী কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।


প্রাক-প্রাথমিকসহ ৯টি শ্রেণীর জন্য ১৩টি শ্রেণীকক্ষ দরকার। বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী শ্রেণীকক্ষসহ ৭টি কক্ষে পালাক্রমে ও গাদাগাদি করে কোনমতে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আসবারপত্র সংকট, ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সংকট থাকায় সঠিকভাবে পাঠদানে ব্যঘাত ঘটছে। এ বিদ্যালয়ে ২০১৫ ও ১৬ সালের সমাপনী পরীক্ষায় পিএসসি ও জেএসসিতে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে উপজেলায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এদিকে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর না থাকায় স্কুল চলাকালে মাঠে অবাধে ভাবে গরু ছাগল বিচরণ ও সাধারণ মানুষ যাতায়াত করছে। এছাড়া গত তিন বছর ধরে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা শ্রেণী কার্যক্রম চললেও সরকারীভাবে অফিস ম্যানেজমেন্টের জন্য কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। সম্প্রতি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন ২০টি সিলিং ফ্যান অনুদান প্রদান করেছেন বলেও জানান তারা।


লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, মেরাখোলা বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান ভালো। তবে বিদ্যালয়ে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। সমস্যা সমাধানে শিক্ষা অধিদপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।


বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটসহ নানা সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহন মন্ডল বলেন, সমস্যা সমাধান পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিদ্যালয়টি আমাদের বিশেষ নজরে আছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির মাসিক মিটিংয়ে বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে আলোচনা পূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/আরমান/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com