গাইবান্ধায় ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিস্থিতি আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ১৮:৫১
গাইবান্ধায় ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিস্থিতি আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র আয়োজনে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশ ও ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এসডো এর সহযোগিতায় ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিস্থিতি আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গাইবান্ধায় দিনব্যাপী সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।


১০ জুন, শনিবার গাইবান্ধা সদরের রাধাকৃষ্ণপুর এসকেএস ইন হলরুমে জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।


অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি’র ফেলো এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সভাপতিত্ব করেন।


সভাপতির বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে হলে মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। এবিষয়ে দলমত নির্বিশেষে সবাই একমত। শিক্ষা বলতে শুধু লক্ষ লক্ষ এ প্লাস বা গোল্ডেন এ নয়, শিক্ষার মানের উন্নয়ন করতে হবে। মান নিশ্চিত করতে হলে তা প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই শুরু করতে হবে। যে পরিমাণ অর্থ সরকার শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয় তা যথেষ্ট নয়। সম্পদের অভাব সত্ত্বেও শিক্ষা খাতে আরও বরাদ্দ দেয়া সম্ভব। আবার পৃথিবীব্যাপী এটা প্রচলন যে শিক্ষা খাতের মোট বরাদ্দের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা খাতে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের কত দেয়া হয় এটা প্রশ্ন আছে।


প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি।


তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন- দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। যে-সব এলাকায় দারিদ্রতার হার বেশি সেখানে উন্নতির হার বাড়াতে হবে। চর এলাকায় শিক্ষকদের থাকার জন্য রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্কুলের সাথে সংযোগ সড়ক থাকতে হবে। সরকারের চ্যালেঞ্জিং স্কুলগুলোর সুনির্দিষ্ট লিস্ট করে সংযোগ সড়ক করে দেয়া উচিত। হোক সেটা পাকা বা হেয়ারিং রাস্তা। সরকার বলছে গ্রামে দারিদ্রতার হার ৬০ পার্সেন্ট। এটা কখনো হতে পারে না। সুন্দরগঞ্জে দারিদ্রতার হার ৭০ থেকে ৮০ পার্সেন্ট। যেখানে দারিদ্রতার হার বেশি সেখানে উপবৃত্তির হার বেশি করতে হবে।


হাইস্কুলে যারা সাইন্সের ছাত্র আছে, যারা ক্লাস ৭,৮,৯ বা ১০ মিস করল, তারা কিন্তু পরবর্তীতে গ্রো করতে পারবে না। ইন্টারন্যাশনালি প্রাইমারি পাশ করাচ্ছি। ক্লাস সিক্স বা সেভেনে উঠার যোগ্যতা অর্জন করছে কিনা। যারা দেশে বা বিদেশে ভালোভাবে পড়াশোনা করে যোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা নিজের যোগ্যতায় করেছে। দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থা তেমন সাপোর্ট দেয়নি।


চর এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে। ঢাকার প্রাইমারি স্কুলের সিস্টেম যা, গ্রামে তা, সদরে তা, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় তা, চরেও তা। এটা হতে পারে না। একেক জেলার বাস্তবতা একেক রকম। একেক জেলার অগ্রাধিকার একেক রকম। বন্যার পানি যখন স্কুলে। যে এলাকায় ৮০ পার্সেন্ট লোক দরিদ্র। সে এলাকার বাবা মার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকবে না। সে চাইবে তার মেয়ে বাড়িতে কাজ করুক, গার্মেন্টস এ চলে যাক। কৃষি কাজ করুক। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই ক্লাস সিক্স সেভেনে উঠার আগেই বিয়ে দিয়ে দিল। তাহলে প্রাইমারি স্কুলে পড়ে লাভ কি? একটা ইনসেন্টিভ হতে পারত, তা হলো উপবৃত্তির হার যদি বেশি হত।


প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর ভিডিও প্রেজেন্টেশন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।


উন্মুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বক্তব্য রাখেন- গবেষক মোজাহিদুল ইসলাম। সম্মানিত আলোচকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ, সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক সভাপতি অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, এসকেএস স্কুল এন্ড কলেজ ভাইস প্রিন্সিপাল ড. অনামিকা সাহা, ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ইএসডিও জেনারেল কমিটির সদস্য আখতারুজ্জামান, সিপিডি ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান।


উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাজহার উল মান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্স এর চেয়ারম্যান মকছুদার রহমান শাহান, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর সহকারী পরিচালক হামিদুর রহমান, জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক অফিসার আখতার হোসেন, ছিন্নমূল মহিলা সমিতির পরিচালক মুর্শিদূর রহমান খান, নাগরিক সংগ্রাম পরিষদের জাহাঙ্গীর কবির তনু, সাংস্কৃতিক কর্মী দেবাশীষ দাস দেবু, সাংবাদিক সিদ্দিক আলম দয়াল, অবলম্বন ফাউন্ডেশন নির্বাহী প্রধান প্রবীর চক্রবর্তী, সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী, আসাদুজ্জামান মামুন, সদর উপজেলা মডেল স্কুল এর শিক্ষক অশোক সাহা, আসাদুজ্জামান স্কুল এন্ড কলেজ এর শিক্ষক রাজু চৌহান, এ্যাড. হানিফ বেলাল,সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক সহ- সভাপতি শিরিন আক্তার,সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ,সনাক সহ- সভাপতি পলাশ, সাংবাদিক রিক্তু প্রসাদ, আফরোজা লুনা, শিক্ষক সৌমেন সিংহ গোস্বামী সহ অনেকে।


পটভূমি উল্লেখ করে বলা হয়- বাংলাদেশে সরকারি অর্থে উন্নয়ন কার্যক্রম মূলত সেবাপ্রদানকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্ধারিত ও বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। এ ধরনের কার্যক্রমে অগ্রাধিকার নির্ণয়, বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যুক্ত থাকেন সরকারের আমলা বা আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ। নির্ধারিত ফর্ম ও চেকলিস্ট ব্যবহার করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের মোট ১৩৬ জনের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিদ্যমান বাস্তবতা, এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন অঙ্গীকার, পরবর্তীতে বাস্তবায়ন চলমান শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষার মান, শিক্ষা অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনায় জনসম্পৃক্ততা বিষয়ে অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়ন সুযোগ চিহ্নিত করা এবং তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও অংশীজনের গোচরে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সামাজিক নিরীক্ষা উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে।


প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এর জাতীয় বাজেট সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়- “ঝরে পড়া রোধে সুবিধাবঞ্চিত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ভাতা ও শিক্ষা অনুদান প্রদান” এর লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৫০ লাখ সুবিধাভোগী থেকে শূন্য দশমিক ৮৩ লাখ সুবিধাভোগীতে নেমে এসেছে ২০১৮-১৯ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে। ১০ দশমিক ৫০ কোটি সুবিধাভোগীদের জন্য ‘সকলের জন্য বিনামূল্যে সময়মতো পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ’ এর বাজেট ২০১৮-১৯ থেকে শুরু করে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত স্থিতিশীল ছিল। এটি লক্ষণীয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১০ কোটি সুবিধাভোগীতে কমিয়ে দেয়া হয়েছিল।


জাতীয় গড়ের তুলনায় গাইবান্ধায় শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থান- বিদ্যালয়ে তালিকাভুক্তির হার গাইবান্ধা জেলার ক্ষেত্রে জাতীয় হারের তুলনায় বেশি হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার জাতীয় হারের চেয়ে বেশি। বিশেষকরে বালিকাদের ক্ষেত্রে এই হার গাইবান্ধা জেলায় জাতীয় পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক বেশি।


উল্লেখ্য যে- সুন্দগঞ্জে সর্বমোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫৯ টি। গাইবান্ধা জেলায় বাল্য বিবাহের হার জাতীয় হারের চেয়ে বেশি। এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক দিয়ে জাতীয় হারের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম। নিরাপদ খাবার পানির দিক দিয়ে জেলার পরিসংখ্যান ভাল হলেও প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা এখনো নিরাপদ স্যানিটেশনের আওতায় আসেনি। শিক্ষা অবকাঠামোতে বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় বাথরুম তৈরি করা ও তা নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো নিদিষ্ট জনবল না থাকার অন্যতম কারণ সরকারি বরাদ্দের অপ্রতুলতা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন।


বিবার্তা/খালেক/সউদ/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com