শিরোনাম
অনাহুত পরিবহন ধর্মঘটে ক্ষুব্ধ মানুষ
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩৫
অনাহুত পরিবহন ধর্মঘটে ক্ষুব্ধ মানুষ
এইচ আর তুহিন, যশোর
প্রিন্ট অ-অ+

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় অনাহুত পরিবহন ধর্মঘটে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।


তারা জানান, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের ধর্মঘট ডাকার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। তাই অবিলম্বে এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হোক।


যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চুয়াডাঙ্গার বাসচালক জামির হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রবিবার ভোর ৬টা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। শনিবার যশোরে অনুষ্ঠিত পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের আঞ্চলিক কমিটির সভা থেকে এ ধর্মঘট ডাকা হয়।


দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ মাইক্রোবাসের পাঁচযাত্রী যে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন, তার জন্য চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের ওই বাসচালককে দায়ী করে মানিকগঞ্জের আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন গত বুধবার।


ধর্মঘটের ফলে অচল হয়ে পড়েছে গোটা সড়ক যোগাযোগ। রবিবার সকাল থেকে খুলনা বিভাগের কোনো রুটে যানবাহন চলাচল করেনি। টার্মিনাল ও স্টপেজগুলোতে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফলে থমকে গেছে জনজীবন।



হঠাৎ ডাকা ধর্মঘটে যশোরে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রী। সকাল থেকে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্টপেজে বহু যাত্রীকে ভিড় করতে দেখা যায়। কিন্তু কোনো যানবাহন ছেড়ে না যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েন।


টার্মিনালে আসা ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের ধর্মঘট ডাকার কোনো যুক্তি নেই। তাই অবিলম্বে এ অযৌক্তিক ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হোক।
যশোরের ব্যবসায়ী সাহিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের গাড়ি চালকরা কি সব আইনের উর্ধ্বে ? তারা গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ হত্যা করলে বিচার হবে না ? আমরা কি তাদের কাছে জিম্মি ? তার আরও প্রশ্ন- রাষ্ট্র কী চালকদের চেয়ে দুর্বল ?


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি চাকরিজীবী আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এভবে রাস্তায় নামার সাহস এরা কোথায় পায়? এদের ইন্ধন দিচ্ছে কারা? কাউকে খুন করলে যদি ফাঁসির সাজা হয় তাহলে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করলে কেন বিচার হবে না?


এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাতায়াতের জন্য বিকল্প পথ হিসেবে রেল ও বিমানে ঝুঁকছে মানুষ। রবিবার দুপুরে যশোর জংশনে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের উপচে পড়া ভিড়। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছেন। বরাদ্দ সিটের তিন গুণ বেশি যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রেলওয়ে কর্মীদের।


স্টেশনে কথা হয় ক্ষুব্ধ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। যশোর শেখহাটি এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, শ’শ’ মানুষ রাস্তায় মারা যাচ্ছে। এরমধ্যে একজন চালকের আদালত যাবজ্জীবন দিয়েছেন আর অমনি আন্দোলনে নেমে পড়লো শ্রমিকরা। সাধারণ মানুষের কী পরিণতি হচ্ছে সেটি তো তারা ভাবে না। নিজেদের স্বার্থে লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন করছে।


নজরুল ইসলামের সাথে একমত হয়ে কামরুজ্জামন নামে একজন বলেন, যারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের পায়তারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।


রংপুরের জগদীশ চন্দ্র রায় জানান, তিনি সকালে ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বাস না পেয়ে ট্রেনে যশোর স্টেশনে এসেছেন। অপেক্ষায় আছেন ট্রেনের। তবে রাত ১০টার আগে উত্তর অঞ্চলের ট্রেন নেই।


তিনি আরো বলেন, সারাদিন এখানে বসে থাকতে হবে। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে হাজারো মানুষ। এভাবে চলতে পারে না দেশ।


রাজশাহীর রুবেল হোসেন বলেন, জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করে আন্দোলন করা ঠিক নয়। আদালতের রায়ে চালকের যাবজ্জীবন হয়েছে। তারা আদালতের কাছে গিয়ে দাবি করুক। জনগণকে জিম্মি করে নয়।



যশোর জংশনের স্টেশন মাস্টার পুষ্পল কুমার চক্রবর্তী জানান, বাস ধর্মঘটের কারণে ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এই স্টেশনে ১০০ আসন বরাদ্দ আছে। কিন্তু বরাদ্দ আসনের তিনগুণ যাত্রী যাতায়াত করছে। যাত্রীদের অনুরোধে আসনবিহীন টিকিট দেয়া হচ্ছে।


যশোরের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (স্পেশাল পিপি) এসএম বদরুজ্জামান পলাশ বলেন, সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিৎ। আদালতের রায়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে আইনী প্রক্রিয়ায় আপিলের সুযোগ আছে। সেটি না করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা দুঃখনক ঘটনা।


অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, যে ধারায় বাসচালক জামির হোসেনের বিচার হওয়ার কথা, সে ধারায় বিচার না করে অন্য ধারায় বিচার করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মাথায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ নিয়ে আমরা গাড়ি চালাবো না।


এ বিষয়ে যশোর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ আবু সরোয়ার জানান, কেউ গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিচ্ছে, আমাদের সামনে এমনটা চোখে পড়েনি, কিংবা কেউ অভিযোগ দেয়নি। কেউ বাধা দিলে অথবা অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর কেউ যদি তার গাড়ি না চালায় তাহলে আমাদের তো কিছু করার নেই।


বিবার্তা/তুহিন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com