সিইউএফএল সার কারখানা কী ‘গবাদিপশু’র যমদূত?
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩, ১৫:০০
সিইউএফএল সার কারখানা কী ‘গবাদিপশু’র যমদূত?
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় রাষ্ট্রায়ত্ত চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির (সিইউএফএল) বর্জ্য মিশ্রিত বিষাক্ত পানি পানে একের পর এক গবাদিপশু মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সিইউএফএল কারখানা কর্তৃপক্ষ বারবার যুক্তি দেখাচ্ছেন তাদের কারখানা বন্ধ রয়েছে। বর্জ্য বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে গরু, মহিষ ও ছাগল মারা যাওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। তারা উল্টো অভিযোগের তীর ছুঁড়ছেন ডিপিইও পাওয়ার প্ল্যান্ট, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানী (কাফকো), ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল) ও ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের দিকে।


কেউ দায় না নিলেও মৃত গবাদিপশু গুলোর পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন বলছে ‘বিষাক্ত বর্জ্যে’ গতকাল ১০ মার্চ ১২টি গরু-মহিষের মৃত্যু হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা যাই বলুক না কেন স্থানীয়দের বিক্ষোভ মিছিল থেকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘এতে কোন সন্দেহ নেই সিইউএফএল এর বর্জ্য মিশ্রিত বিষাক্ত পানি পানে মহিষগুলো মারা গেছে।’ যেহেতু কারখানার পশ্চিমে গোবাদিয়া খাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।


অতীত তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল দুপুরে আনোয়ারায় বিষাক্ত বর্জ্য পানি খেয়ে ১৩টি মহিষ মারা যায়। ২০২১ সালের ৬ মে নির্গত গ্যাস বর্জ্যের পানি খেয়ে ৮টি মহিষ মারা যায়। গত বছরের ১৪ এপ্রিল মাঝিরচরে ১২টি মহিষ বর্জ্য মেশানো দূষিত পানি পান করে মারা যায়। এরআগেও কারখানার বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস ছাড়ার কারণে ২ টি গরু মারা যায়। এভাবে একের পর এক মরছে গবাদিপশু।


ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মোহাম্মদ ইছহাক ও নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির (সিইউএফএল) নির্গত গ্যাসের বর্জ্য গোবাদিয়া খালে প্রবেশ করায় বিষাক্ত হয়ে পড়ছে খালের পানি। বিভিন্ন সময়ে এ খালের পানি খেয়ে গবাদি পশুর মারা যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। খালের আশপাশে স্থানীয়দের গরু-ছাগল ও মহিষ বিচরণ কেন্দ্র। ফলে, খালের পানি পান করলেই গবাদিপশু গুলো মারা যাচ্ছে বারবার ।’


কিন্তু চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লি. (সিইউএফএল) ল্য্যবরেটেরী কর্মকর্তারা স্থানীয়দের চাপের মুখে খালের পানির নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা-নীরিক্ষা, পোস্টমর্টেম ইত্যাদি কিছু কথায় ভূলিয়ে রেখে প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেব বলে কৌশলে সময়ক্ষেপণ করেন। পরে ঘটনা নীরব হয়ে যায়।


বারশত ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির (সিইউএফএল) নিগত গ্যাসের বিষাক্ত বর্জ্য গোবাদিয়া খালে ফেলে। সে খালের পানি গবাদিপশু পান করলে ঘটে মৃত্যুর ঘটনা। একের পর এক মহিষ মারা গেলেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেননি কতৃপক্ষ।’


বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, ‘সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে এর আগেও বেশ কয়েকবার বিষাক্ত পানির কারণে অনেক গরু–মহিষ মারা গেছে। স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেই। কারখানা কর্তৃপক্ষ এসব কর্ণপাত করছেন না। এবারও গরু–গহিষ মারা যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। ক্ষতিপূরণ দিবে বলেছে ডিএপি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য মনেহয় না।’


সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মিজানুর রহমান জানান, ‘সিইউএফএল গত চার মাস ধরে বন্ধ। কারখানা এখন উৎপাদনে নেই। যেহেতু কাজ চলছে না। বর্জ্য কিভাবে বের হবে। এখনতো কোন কারণেই গরু-মহিষ মারা গেলে সিইউএফএলের দিকে আঙ্গুল তুলছে সবাই। অথচ আশেপাশে ডিপিইও পাওয়ার প্ল্যান্ট, কাফকো, ডিএপিএফসিএল ও ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। এসব কারখানা থেকেও বিষাক্ত পানি বের হতে পারে। যা নদীতে গিয়ে পড়ছে।’


ডিএপি সার কারখানার মহা ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল জানান, ‘আমাদের কারখানা থেকে যে পানি বের হয় তাতে পশুর মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই। তারপরও মৃত পশুগুলো পোস্টমর্টেম করে দেখে তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


বিবার্তা/জাহেদ/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com