শিরোনাম
তিন বছর ধরে বেহাল রাজশাহী-চাঁপাই মহাসড়ক
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:২৭
তিন বছর ধরে বেহাল রাজশাহী-চাঁপাই মহাসড়ক
রিমন রহমান, রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বেহাল দশা রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের। ৪৫ কিলোমিটার এ মহাসড়কের গোদাগাড়ী উপজেলা সদর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশ্বরোডের মুখ পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এ অংশটি হয়ে উঠেছে সাক্ষাৎ মরণফাঁদ।


স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, প্রায় তিন বছর আগেই হাজার হাজার খানাখন্দে ভরে উঠেছে ব্যস্ততম সড়কটি। দীর্ঘ সময় ধরেই খানাখন্দের মধ্যে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। মাঝে মাঝে পাথর কুচি আর গুঁড়া ইট ফেলে তার ওপর পিচ ছিটিয়ে গর্তগুলো বন্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু তা সাতদিনও স্থায়ী হচ্ছে না।


সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাশিয়াডাঙ্গা থেকে পূর্বে গোদাগাড়ী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারে কোনোভাবে যান চলাচল করতে পারলেও গোদাগাড়ী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশ্বরোড মুখ পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এই ২৫ কিলোমিটারে গর্তের পাশে গর্ত। এ অংশে সড়কের ওপর কোনো কোনো স্থানে কার্পেটিং পর্যন্ত নেই। গোদাগাড়ীর হাতনাবাদ, বালিয়াঘাট্টা ও দারিয়াপুর অংশে কার্পেটিং তুলে ইট বিছিয়ে হেরিংবন্ড করা হয়েছে।


বালিয়াঘাট্টা এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের কবীর জানান, সড়কটির স্থায়ী সংস্কার না করে মাঝে মাঝে ইটের গুড়া ফেলা হচ্ছে। কিন্তু গাড়ির তীব্র চাপের কারণে তা মোটেও স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে মহাসড়কে আবারও ফিরছে চেনা দুর্ভোগ। এভাবেই গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে সীমাহীন দুর্ভোগকে সঙ্গী করে লাখো মানুষ প্রতিদিন চলাচল করছে সড়কটি দিয়ে।


মহাসড়কটিতে চলাচলকারী গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটি বর্তমানে দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলোর একটি। অথচ সোনামসজিদ স্থল-বন্দরের আমদানি-রফতানির নিকাশ পথ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ২০ হাজারের বেশি হালকা ও ভারি যানবাহন চলাচল করে। চলাচলের অযোগ্য এ সড়কে চলতে গিয়ে সড়কের ওপর প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ছে গাড়িগুলো। স্বাভাবিক সময়ে সড়কটি অতিক্রম করতে এক ঘণ্টা লাগলেও বর্তমানে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় চলে যাচ্ছে।


রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদের একমাত্র নিকাশ পথ। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সড়কটি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দেশের আমদানি-রফতানিও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে প্রতিকূল প্রভাব। খানাখন্দে ভরা সড়কের কারণে অনেক সময় পণ্যবাহী গাড়ি বিকল হয়ে সড়কে পড়ে থাকছে। এতে যথাসময়ে পণ্য পৌঁছাতে না পেরে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।


গোদাগাড়ীর হাতনাবাদ এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর বলেন, সড়কের অবস্থা এতোই করুণ- এ সড়ক দিয়ে গাড়িতে করে কোনো রোগি নিয়ে গেলে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। শুধু রোগিই নয়, রিকশা-অটোরিকশার যাত্রীরাও এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে এখন ভয় পান। হাজার হাজার খানাখন্দে পড়ে তাদের কোমর ব্যাথা হয়ে যায়।


তবে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামি মার্চ মাসে সড়কটি সংষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মকর্তাদের ভাষায়, সড়কটির অবস্থা এতোই করুণ- সেটিকে সংষ্কার করার উপায় নেই। সড়কটি নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।


সওজের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, গত ১০ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাহেদা খানম মহাসড়কটি পরিদর্শন করেছেন। এ দিন তিনি দ্রুত সড়ক সংস্কার শুরুর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এর আগে সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।


সওজের এই কর্মকর্তা বলেন, সড়কটির অবস্থা খুব খারাপ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দরপত্র প্রক্রিয়ার কারণে কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে সড়ক পুনঃনির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এখন দরপত্র মন্ত্রণালয়ে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় আছে। সেটি শেষ হলেই কাজ শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি।


বিবার্তা/রিমন/নাজিম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com