শিরোনাম
যেন মৃত্যুফাঁদ চট্টগ্রামের নির্মাণাধীন উড়ালসেতু
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:২৪
যেন মৃত্যুফাঁদ চট্টগ্রামের নির্মাণাধীন উড়ালসেতু
রাজু আহমেদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামে দিনের বেলায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন উড়ালসেতুর নিচ দিয়ে চরম ভোগান্তি ও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন মানুষ। মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে নির্মাণাধীন উড়ালসেতুটি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেক পথচারী।


দেখা গেছে, সোমবার নগরীর ওয়াসার মোড় থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ বন্ধ করে দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে গার্ডার উঠানো কাজ করছেন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। ওয়াসার মোড় থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়েছে অফিসগামীদের। অন্যদিকে আলমাস সিনেমা হয়ে কাজীরদেউরী দিয়ে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম হয়ে চলাচল করতে হয়েছে সকল যানবহনকে।



অন্যদিকে নগরীর ব্যস্ততম এলাকা জিইসি মোড়ে উন্মুক্তভাবে উড়ালসেতুর কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। দেখা যায় নির্মাণ শ্রমিকরা উড়ালসেতুতে পানি দিচ্ছেন। আর সেই পানি এসে পড়ছে পথচারীদের গায়ে। আবার কোনো কোনো জায়গায় গার্ডারের উপর থেকে ইট, কংকর, সিমেন্ট ও ঝালাইয়ের আগুন পড়ে প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ আহত হচ্ছে।


জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি (শনিবার) সন্ধ্যা সাতটার দিকে জিইসি মোড় সংলগ্ন দি প্যানিনসুলার বিপরীত দিকের সড়ক এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুয়াজ্জ হোসেনসহ শিক্ষক পরিবারের সদস্যদের বহন করা একটি গাড়ীর উপর নির্মাণ সামগ্রী এসে পড়ে। এতে কেউ আহত না হলেও গাড়ী পেছনের অংশটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ মুয়াজ্জম হোসেন বিবার্তাকে বলেন, ওই দিনের কথা এখনো মনে পড়ে। বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। আমার স্ত্রী ও মেয়েরা গাড়ির পেছনে বসা ছিল। হঠ্যাৎ করে গাড়ির পেছনের অংশে উড়ালসেতুর নির্মাণসামগ্রী পড়ে গাড়ির পুরো কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এছাড়া গাড়ির পেছনের অংশের ব্যাপক ক্ষতি হয়।


তিনি বলেন, উড়ালসেতুর কাজ করার কথা রাত ১২টার পর কিন্তু তারা কাজ করছে দিনের আলোতে। তাছাড়া কোনো সর্তকবার্তা ছাড়াও কাজ করছেন শ্রমিকরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে; কিন্তু কর্তৃপক্ষের চোখ পড়ছে না! আশা করছি সিডিএ কর্তৃপক্ষ এ সকল বিষয়ে তদারকি করবে।


সিডিএ’র সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর সাথে নির্মাণ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের যে চুক্তি হয়েছে তাতে রাত ১২টার পর কাজ করা এবং পথচারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ ছিলো। কিন্তু সিডিএ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মানছেন না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স র‌্যাংকিন গ্রুপ।এছাড়াও বিধিমালায় পথচারীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও এসব বিষয়কে তোয়াক্কা করছে না সংস্থাটি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেই শর্ত লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলে দিনের বেলায়ও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাও আবার অরক্ষিত এবং ঝুঁকি নিয়ে।


রাস্তায় চলাচলকারী প্রাইভেটকার চালক আনোয়ার হোসেন বিবার্তাকে বলেন, এ সড়কে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো ঘটনা ঘটেই চলছে। হঠাৎ সিমেন্টযুক্ত পানি এসে গাড়িতে পড়ে; এতে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আবার কখনো কংকর বা পাথার এসে গাড়ির গ্লাসে এসে পড়ে।


তিনি জানান, কিছুদিন আগে ঝালাইয়ের আগুন পড়ে একটি প্রাইভেটকারের কাঁচ পুড়ে গেছে। তাছাড়া গাড়িটির বিভিন্ন অংশে পোড়া দাগ লেগে গেছে। মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর হয়। তারপরও যেতে হয়।


ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যনাজার মনির জানান, আমরা সিডিএ'র নিয়মনীতি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। তবে কয়েকটি যায়গায় ত্রুটি ছিলো এবং তা সংশোধন করা হয়েছে। আর সকালে যে কাজ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। গার্ডারের কাজ রাতেই করা হয়।


চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, এ সকল বিষয়ে আমাদের নিকট অভিযোগ এসেছে। সাধারণ মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই কাজ করতে হবে এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তা না হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/রাজু/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com