শিরোনাম
যশোর সেতু নির্মাণে মানা হয়নি বিআইডব্লিউটিএ গেজেট
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২১, ২০:৫১
যশোর সেতু নির্মাণে মানা হয়নি বিআইডব্লিউটিএ গেজেট
যশোর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মহাকবি মাইকেলের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের যশোরের ঝিকরগাছা অংশে নির্মিত সেতু বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) গেজেট না মেনে করা হয়েছে।


ফলে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতু নদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সেতুর গার্ডারের নিচের অংশ পানি ছুঁতে চলেছে। আর ভরা মৌসুমে এই সেতুর নিচ দিয়ে কোন নৌকা চলাচল করতে পারবে না।


বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পশ্চিম শাখার যুগ্মপরিচালক আশরাফ হোসেন সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে গেজেট না মেনে নির্মাণের কথা বলেন।


যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক এশিয়ান হাইওয়ে হিসেবে প্রস্তাবিত। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল যেতে হলে ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদের ওপর ৬০ বছরের পুরনো সরু ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের ওপর দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ির চলাচল করতে হয়। যে কারণে দেড় বছর আগে এ ব্রিজটির পাশে শুরু হয় ছয় লেনের রাস্তার জন্য দুটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ। ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে এ ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে একটি ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আরেকটির কাজ শিগগিরই শুরু হবে। প্রতিটি ব্রিজ ১২০ মিটার লম্বা ও ১৫ মিটার চওড়া। দুটি করে পিলার ও এবাটমেন্ট ওয়াল এবং ২১ গার্ডার বা ভিম দেয়া হয়েছে।


পুরনো ব্রিজটির চেয়ে মাত্র দেড় মিটার উঁচু করা হয়েছে। ব্রিজটি পিসট্রেজ বা সমান করা আছে। ব্রিজের কাজ করছে মনিকো এবং ডেনকো নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ শেষ হওয়া ব্রিজটি দেখে এলাকাবাসী হতাশ হয়েছে। পুরনো ব্রিজের নিচ অংশ বা তলদেশ কখনো নদের পানি স্পর্শ করতে পারেনি। অথচ বৃষ্টিতে নদে পানি সামান্য বাড়ায় নির্মাণাধীন অর্থাৎ নতুন ব্রিজের নিচের অংশ পানি ছুঁতে চলেছে। ফলে ভরা বর্ষা মৌসুমে নতুন এ ব্রিজের নিচ দিয়ে কোনো নৌকা তো দূরের কথা একটি ডোঙ্গাও চলাচল করতে পারবে না।


ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, নতুন ব্রিজ অনেক নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্রিজের কারণে নদ তার নাব্যতা আরো হারাবে। ব্রিজের নকশা ঠিক হয়নি। পুরনোটির নিচ দিয়ে নৌকা, জাহাজ চলাচল করতে পারলেও নতুন ব্রিজটির নিচ দিয়ে যেতে পারবে না।
কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, নদীর ওপর ব্রিজ করতে হলে অবশ্যই বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা অনুমোদন করতে হয়। কিন্তু ভুল নকশায় সওজ ব্রিজ দুটি নির্মাণ করছে। ব্রিজের নিচে দিয়ে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না।
এদিকে, বৃহস্পতিবার নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পশ্চিম শাখার যুগ্মপরিচালক আশরাফ হোসেন সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, সেতুটি নির্মাণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অনুমোদন নেয়া হয়নি। নির্মাণাধীন সেতুটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন গেজেটও মানা হয়নি। এক পর্যায় তিনি নদের পানি থেকে সেতুর উচ্চতা মেপে দেখেন। যেখানে সর্বনিম্ন উচ্চতা থাকার কথা কুড়ি ফুট সেখানে, আছে ১৫ ফুট। এসব দেখে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।


নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পশ্চিম শাখার যুগ্মপরিচালক আশরাফ হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে পত্র লিখবেন। সেতুর বাকি অংশ নির্মাণে গেজেট মানার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে উপস্থিত মানুষদের আশ্বস্ত করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডেপুটি প্রকল্প ম্যানেজার সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন, ডিআরই কনসালটেন্ট আহম্মদ আলী প্রমুখ।


এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রিজ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্রিজ দুটির নকশা করা হয়েছে। পুরনো ব্রিজের মাপে এটি করা হচ্ছে। নদীর পানি যদি গার্ডারে লেগে যায় তাহলে নদী খনন করতে হবে। তা না হলে নিচ দিয়ে নৌযান চলতে পারবে না।


বিবার্তা/তুহিন/ইমরান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com