যশোর শহরতলীর পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে পলাতক তিন বন্দিকে ২০ দিনেও উদ্ধার করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল হাসান।গত ১০ জুলাই রাতে বিভিন্ন দাবিতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দিরা তাণ্ডব চালায়। এ সময় তিন বন্দি পালিয়ে যায়।
এদিকে তাণ্ডব ও পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় নিয়েছে।৫ কর্ম দিবসে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা থাকলেও করোনাসহ বিভিন্ন কারণে তা জমা দিতে পারেনি।তদন্তের সময় আরো ১৫ কর্ম দিবস বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান জানিয়েছেন।
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল হাসান জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দি তিন শিশুকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।তবে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১০ জুলাই রাতে বিভিন্ন দাবিতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দিরা বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। এই সুযোগে কেন্দ্রের তিন বন্দি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম হাতি গ্রামের মৃত আইউব আলীর ছেলে বাপ্পারাজ (১৬), বরগুনার আমতলী থানার উত্তরগদখালি গ্রামের মোস্তফা কাজীর ছেলে শাকিল (১২) ও নাটোরের কান্দিভিটা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সোহান (১৬) পালিয়ে যায়।
ওই দিন পরিস্থিতি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।ওই রাতে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হাজির হন।ওই রাতেই জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের হস্তক্ষেপে শিশুদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।পরের দিন ১১ জুলাই এ ঘটনায় থানার জিডি করা হয়।এর পাঁচ দিন পর ১৫ জুলাই থানায় মামলা করা হয়।মামলার বাদী হন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তৎকালীন সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন।মামলায় ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে অধিকাংশকে টাঙ্গাইল শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে বার বার কি কারণে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে, তার নেপথ্য ঘটনা বের করতে ১১ জুলাই গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামাকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আতিকুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন। ১২ জুলাই তারা তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তারা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বক্তব্য নেয়ার জন্য নোটিশ দেন। ১৩ জুলাই বিকেলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে যান ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেন। পরের দিন ১৪ জুলাইও তারা সেখানে গিয়ে বন্দিদের বক্তব্য নেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান কাজী সায়েমুজ্জামান জানান, তদন্তকালে তারা দুইটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন।একটি বার বার শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কি কারণে বিক্ষোভ ভাঙচুর ও বন্দি পলায়নের ঘটনা ঘটছে। আর একটি গণপূর্তের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেন।
৫ কর্ম দিবস অর্থাৎ ২২ জুলাই তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা থাকলে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিতে পারেননি।তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান জানান, ১২ জুলাই থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার পর ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা ছিল।কিন্তু বিভিন্ন কারণে রিপোর্ট জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। সেই কারণে আমরা তদন্তের সময় আরো ১৫ কর্ম দিবস বৃদ্ধি করেছি।অর্থাৎ আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা রিপোর্ট জমা দিতে পারবো বলে আশা করছি। তবে তদন্তকালে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবহেলা ও মাদকের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান সায়েমুজ্জামান।
তিনি বলেছেন, মাদক বন্ধ করে দেয়া, কেন্দ্রের আলাদা আলাদা রুমে সিনিয়র জুনিয়র ভেদে খাদ্য সরবরাহ ও সুযোগ-সুবিধা নাকচ করা ও টঙ্গী থেকে রাধা নামে এক বন্দি এখানে এসে ইন্ধন দিয়ে বন্দিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে এসব ঘটনা ঘটানো হয়। এছাড়া ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন বন্দি কিশোরের হত্যা ও ১৫ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক এডিএমের তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বার বার শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে।
বিবার্তা/তুহিন/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]