শিরোনাম
বিধবা মায়ের আশার প্রদীপও নিভিয়ে দিল করোনা!
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২১, ১৯:১১
বিধবা মায়ের আশার প্রদীপও নিভিয়ে দিল করোনা!
চবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

তানজিদা মোরশেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। ২০০৮ সালে তাঁর বাবা মারা গেছেন। দুই বোন তাঁরা, ভাই নেই। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। তাই পরিবারের ভার এসে পড়ে তানজিদার ঘাড়ে। তাঁর টিউশনির টাকাতেই চলত মা–মেয়ের সংসার। করোনায় তানজিদার পরিবারের শেষ আশার প্রদীপও নিভিয়ে দিল।


এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তানজিদা মোরশেদ। তানজিদার সহপাঠী গোলাম মোস্তফা সুমন বলেন, গতকাল বুধবার তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৩৭–এ ছিল। পরে তা আরো নিচে নামতে থাকলে তাকে সার্জিস্কোপ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টায় তিনি মারা যান।


বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হালিশহর বিহারী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর লাশ দাফন করার মতোও কেউ ছিল না। দাফনের কাজ সম্পন্ন করে করোনাকালে চট্টগ্রামে বহুমুখী সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠান আল মানাহিল ফাউন্ডেশন।


তানজিদা মোরশেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইংরেজি বিভাগের ২০১২–১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। নিজের টিউশনির টাকাতেই পড়াশোনার খরচ চলতেন তিনি। পাশাপাশি মাকে নিয়ে সংসারের খরচও তাঁকেই বহন করতে হতো। স্বপ্ন ছিল মাস্টার্স শেষ করে সরকারি চাকরি করবেন।


তানজিদার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। দীর্ঘদিন ধরে নগরীর হালিশহর এলাকায় মা–সহ বাস করতেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি।


তানজিদার বড় বোন তাহমিনা মোরশেদ বলেন, হাসপাতালে ভর্তির একদিন পরই তানজিদা মারা যায়। আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। সে কিছুটা চাপা স্বভাবের ছিল।


তানজিদার সহপাঠী মো. শওকত আলী বলেন, সে কিছুটা চাপা স্বভাবের ছিল। সবকিছু সবার সঙ্গে শেয়ার করতো না। ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব মেধাবী ছিল। যার চূড়ান্ত স্বাক্ষর সে অনার্সের পরিক্ষায় রাখে। অনার্সে সে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়।


শওকত আলী আরো বলেন, ২০০৮ সালে তানজিদার বাবা মারা যান। পরিবারের সেই একমাত্র অবলম্বন ছিল। টিউশনি করে সংসারের ব্যয়ভার বহন করতো। তাঁর আশা ছিল, একটা ভালো সরকারি চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু তা আর হলো না!


ইংরেজি বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাইনুল হাসান চৌধুরী বলেন, তানজিদা পড়াশোনায় যেমন ভালো ছিল, তেমন পরোপকারিও ছিল। সে মাস্টার্সের অনলাইন ক্লাসে আমার সব ক্লাসই করেছে। বিভাগের জুনিয়র-সিনিয়র সবাইকে সে যেকোন বিষয়ে সহযোগিতা করতো। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের আর উপার্জন করার মতো কেউ থাকল না।


বিবার্তা/ইমরান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com