শিরোনাম
টানা ভারি বর্ষণে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাসহ নিহত ২০
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২১, ০৯:০৩
টানা ভারি বর্ষণে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাসহ নিহত ২০
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজার জেলাজুড়ে টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। অতিবর্ষণে পাহাড়ি ঢল, পাহাড় ধস ও বানের পানিতে তলিয়ে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নারী-শিশুসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।


মৃতদের মধ্যে বুধবার ভোররাতে পাহাড় ধসে মাটিচাপায় টেকনাফের হ্নীলা পাহাড়ের পাদদেশে একই পরিবারের ৫ জন, মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুটি পরিবারে ৫ জন এবং বাকিরা পৃথকভাবে পাহাড় ধস ও বানের জলে তলিয়ে মারা যায়। এছাড়াও ঢলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ঈদগাঁওতে নিখোঁজ রয়েছে তিনজন।


তিনদিনের অব্যাহত বৃষ্টির ফলে জেলার নয় উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলকায় পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর ঢলের তোড়ে ধসে গেছে ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী বাণিজ্যিক সড়কের প্রায় ১০০ ফুট এলাকা।


টেকনাফে পাহাড় ধসে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ২টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের ভিলেজারপাড়ার সৈয়দ আলমের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। মাটির নিচে চাপা পড়ে যাওয়া সৈয়দ আলমের ৫ সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।


নিহতরা হলো ভিলেজার পাড়া এলাকার সৈয়দ আলমের ছেলে আব্দু শুক্কুর (১৬), মোহাম্মদ জুবাইর (১২), আবদুর রহিম (৫), মেয়ে কোহিনূর আক্তার (৯) ও জয়নবা আক্তার (৭)। মঙ্গলবার পাহাড় ধসে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকায় রকিম আলী (৪৭) নামে একজন নিহত হন। তিনি হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরঘোনা গ্রামের মৃত আলী আহমদের ছেলে বলে জানায় হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নূর আহমদ আনোয়ারী।


টেকনাফ ইউএনও পারভেজ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে হ্নীলায় একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।


উখিয়ায় পাহাড় ধসে ও পানিতে ডুবে শিশুসহ ৬ রোহিঙ্গা এবং এক স্থানীয় মারা গেছে। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত আরো ৫ জন। বুধবার পালংখালীতে ও মঙ্গলবার উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান তারা। মৃতরা হলেন- উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চোরাখোলা এলাকার আবদুর রহমান (৪৫)।


পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, আবদুর রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বানের পানিতে ভেসে যান। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চোরাখোলা খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।


এছাড়া মঙ্গলবার উখিয়ার বালুখালী ১০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জি-৩৭ ব্লকের নূর মোহাম্মদের মেয়ে নূরনাহার (৩০), শাহ আলমের ছেলে শফিউল আলম (১২), জি-৩৮ ব্লকের ইউসুফের স্ত্রী দিলবাহার (২৪) ও তাদের ২ সন্তান আব্দুর রহমান (৪) ও আয়েশা সিদ্দিকা (২) পাহাড় ধসে মারা যান। একইদিন ৮ নম্বর ক্যাম্পে বানের পানিতে ভেসে বাহার নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। আহতরা হলো- শাহ আলমের মেয়ে নূর ফাতেমা (১৪) ও জানে আলম (৮)।


এদিকে মহেশখালীতে পৃথক দুটি ইউনিয়নে এক বৃদ্ধ এবং এক কিশোরী পাহাড় ধসে মারা গেছেন। মৃত বৃদ্ধ আলী হোসেন (৬৮) হোয়ানক ইউনিয়নে রাজুয়ার ঘোনার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে। ঘুমন্ত অবস্থায় পাহাড় ধসে তাদের বাড়ির ওপর পড়লে তিনি মারা যান।


অরপদিকে, মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহীপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে মোর্শেদা বেগম (১৪) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো দুইজন। মৃত মোর্শেদা বেগম ওই এলাকার আনসার হোসেনের মেয়ে।


সোমবার সকাল হতে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত থেমে থেমে অব্যাহত রয়েছে। টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার জেলার শতাধিক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সমতলও। পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থা পার করছে কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা, কলাতলী, চরপাড়া, কাঙ্গালী পাড়া, সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, সদর উপজেলার খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, পিএমখালী, পোকখালী, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, ঘটিভাঙ্গা, পেকুয়ার মগনামা, উজানটিয়া, চকরিয়ার লইক্ষারচর, কাকারা, বরইতলী, পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড, কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবর ডেইল ও তাবলারচর এলাকা, ঈদগাঁও উপজেলার সদরের ভোমরিয়াঘোনা, দরগাহপাড়া, চৌধুরী পাড়া, পালপাড়া, মাইজপাড়া, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর ও জালালাবাদের পালাকাটা, সওদাগর পাড়া, বাজার এলাকা উখিয়ার হলদিয়া পালং এর রুমখা চরপাড়া, কুলাল পাড়া, বড়ুয়া পাড়া, চৌধুরী পাড়া, নাপিত পাড়া, জালিয়াপালং, রাজাপালং, পালংখালী ও রত্নাপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একই সঙ্গে সাগরের জ্বলোচ্ছ্বাস ও পাহাড়ি ঢলে কয়েক হাজার একরেরও বেশি চিংড়ি ঘেরের মাছ তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে পানের বরজ ও ধানসহ বিভিন্ন সবজির ফসল।


ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ আলম জানান, ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর ঢলে ডুবে থাকা দরগাহপাড়া-ভাদিতলা মুক্তিযোদ্ধা ছুরুত আলম সড়কের কাঠের সাঁকো এলাকায় বুধবার (২৮ জুলাই) দুপুরে মাছ শিকার কালে দু'সহোদরসহ তিনজন স্রোতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন।


নিখোঁজরা হলেন- দরগাহপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ শাহজাহানের; দুই ছেলে মোহাম্মদ ফারুক (২৬) ও দেলোয়ার হোসেন (১৫) এবং আবছার কামালের ছেলে মোহাম্মদ মোরশেদ (১৪) স্থানীয়রা তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।


বিবার্তা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com