বাংলাদেশে একমাত্র ড্রাইভ চেইন উৎপাদন করে অল্প সময়ে সুনাম অর্জন করেছিলো দিনাজপুরের কিউভিসি বিডি লিমিটেড। ২৪ ঘন্টায় ৩ সিফটে ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছিলো জাতীয় পর্যায় এসএমই এওয়ার্ড। হয়েছিলেন দুইবার সেরা কর দাতা। করোনার কারণে বর্তমানে ২০০ স্থলে মাত্র ৪০থেকে ৫০ জন শ্রমিক নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নিভু নিভু করছে। চাকরি হারিয়ে অনেকেই বেকার হয়ে পড়ে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছে। করোনার কারণে যে কোনো সময়ে সম্ভাবনাময় এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার পথে।
জানা গেছে, দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নে মহাসড়কের পাশে ২০১৩ সালের শেষের দিকে গড়ে উঠে বাংলাদেশের একমাত্র ড্রাইভ চেইন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিউভিসি বিডি লিঃ। ৭ থেকে ৯ প্রকার ড্রাইভ চেইন ও স্পকেট তৈরি করে অল্প সময়ে সুনাম অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। গুনগত মানে বুয়েট কর্তৃক স্বীকৃতি পায়।
চেইন তৈরী করে দেশের মোটরসাইকেলের মার্কেটে বেশ আলোড়ন তৈরী হয়।চেইনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২৪ ঘন্টায় ৩ সিফটে ২০০ শ্রমিক কাজ করতেন। করোনার আগে প্রতিদিন ২৫ হাজার চেইন উৎপাদন হত,বর্তমানে ৫ হাজার চেইন উৎপাদন হচ্ছে। এলাকার লোকজন চাকরি পেয়ে বেশ খুশি হয়েছিলো। কারখানায় এক সময় শ্রমিকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে থাকতো।
এভাবে প্রতিষ্ঠানটি ছয় বছর সুনামের সাথে চলে। প্রতিষ্ঠানটি পায় জাতীয় পর্যায় এসএমই এওয়ার্ড।
পর পর দুইবার সেরা কর দাতার সন্মাননাও পায়। এ ছাড়াও কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ অনেক পদকও পেয়েছে।
করোনার কারণে লকডাউন-দোকান-পাঠ বন্ধ এবং সরকারি বিধি নিষেধের কারনে ২০০ শ্রমিকের স্থলে এখন মাত্র ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক নিয়ে কোনো মতো প্রতিষ্ঠানটি চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠান চালাতে অর্থ সংকটে পড়েছেন পরিচালক। করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছেন।কর্তমানে কারখানা জুড়ে সুনসান নিরবতা। যে কোনো সময় অর্থ সংকটের কারণে কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনটি জানিয়েছেন কারখানার ম্যানেজার জাহাংগীর আলম।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনাপরিচালক এটিএম সামসুজ্জামান (জামান) বলে, রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের পরামর্শে ও দেশের জন্য কিছু করার লালিত স্বপ্ন থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলি। ২০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়, ভবিষ্যতে দুই হাজার লোক কাজ করবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। যে ভাবে দ্রুত গতিতে কিউভিসি এগিয়ে যাচ্ছিলো কিন্ত হঠাৎ করেই বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি এখন অর্থ সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি সরকারি সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তিনি বলেন, এত শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পেলো অথচ আমি কয়েক দফায় আবেদন করেও পেলাম না। প্রণোদনার নামে শুধুই ব্যাংকের টালবাহানা। তা হলে প্রণোদনা কে পাচ্ছে বলেও তিনি প্রশ্ন তুলেন।
তিনি আরো বলেন,যারা প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্য, তারা প্রণোদনা পাচ্ছেন না। পাচ্ছে অযোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। অনেকে প্রণোদনার টাকা নিয়ে বাড়ি-গাড়ি করেছেন।
জামান বলেন, ১০ কোটি টাকা মার্কেটে পড়ে আছে। লকডাউনের কারণে দোকান-পাঠ বন্ধ থাকায় তা উঠছে না। করোনা চলে গেলে এই দুঃসময় থাকবে না। আবারো উঠে দাঁড়াতে পারবো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান দিয়ে দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে রুপ নেয় এবং এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সরকার এই করোনাকালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে বাঁচিয়ে রাখবে এমনটি মনে করেন শিল্পের সাথে জড়িত বিশিষ্ঠ ব্যক্তিরা। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে বলে তারা মনে করেন।
বিবার্তা/শিপলু/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]