শিরোনাম
কুড়িগ্রামে সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণকাজ
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২১, ১৪:৩১
কুড়িগ্রামে সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণকাজ
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর সড়কে শুলকুর বাজার এলাকায় নির্মাণাধীন সেতুর কাজ সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। চলাচলের জন্য বিকল্প যে রাস্তা রয়েছে সেটি সামান্য বৃষ্টিতেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাছাড়া বন্যার পানি ঢুকলে রাস্তাটি একেবারে তলিয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।


কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহমেদ একাধিকবার এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে কাজটি সমাপ্তির জন্য তাগাদা দেন। এরপরও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সেতুর নির্মাণ কাজ। অভিযোগ আছে, সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ সম্পন্ন না করেই প্রায় ২ কোটি টাকা বিল হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে কুড়িগ্রাম এলজিইডি টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্মাণ কাজটি পান কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা অ্যান্ড আবু বকর জেবি। ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছিলো ৫ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কাজটি শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর। যা শেষ করার নির্ধারিত মেয়াদ ছিলো ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সাল। নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও গত দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সেতুর নির্মাণ কাজ। শুরু থেকে দেড় বছরে সেতুর ১টি মাত্র স্প্যান নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর বেশিরভাগ কাজ রয়েছে অসম্পন্ন।


সূত্র আরো জানায়, কাজটি বসুন্ধরা অ্যান্ড আবু বকর জেবি’র মালিক আলতাফ হোসেনের নামে হলেও বাস্তবে ঠিকাদার হিসাবে কাজটি করেন শহরের নিম বাগান এলাকার ঠিকাদার গোলাম রব্বানী। এলজিইডি’র কতিপয় কর্মকর্তার সাথে যোগসাজস করে তিনি এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে জানা যায়।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলজিইডি’র একজন কর্মকর্তা জানান, এই কাজের ঠিকাদার মূলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা অ্যান্ড আবু বকর জেবি। কিন্তু গোলাম রব্বানী সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজটি করছেন। এর দায়ভার মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের।


অপরদিকে কাজ না করে কিভাবে বিল উত্তোলন করলো ওই ঠিকাদার এ প্রশ্ন এখন সকলের। তাছাড়া পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতের জন্য সেতুর বিকল্প পার্শ্ব রাস্তাটি হেরিংবোন বন্ড হিসেবে করলেও ওই ঠিকাদার হেরিংবোন রাস্তাটির প্রায় ৫ হাজার ইট তুলে নিয়ে গেছেন এমন অভিযোগও রয়েছে।


গত বছরের বন্যায় রাস্তাটি ভেঙে গেলে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। সেই সাথে সেতুটি না থাকায় উত্তরবঙ্গের বৃহৎ যাত্রাপুর গরুর হাট, সদর উপজেলার পাঁচগাছী, যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নসহ সীমান্তবর্তী অসংখ্য হাট-বাজারে পরিবহণ যাতায়াত সম্পূর্ণরুপে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।


শুলকুর বাজারের ব্যবসায়ী মজিদুল ইসলাম বলেন, সকল ব্যবসায়ীকে পণ্য আনা-নেয়ার কাজে দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে এবং বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও সেতটিু এভাবেই পড়ে আছে। যেনো দেখার কেউ নেই। বিকল্প রাস্তাটি খানা-খন্দে ভরে থাকার ফলে অনেক সময় যানবাহন উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেকেই।


পাঁচগাছী ছত্রপুর গ্রামের মোজাহার জানান, পানি বাড়ার সাথে সাথেই ব্রিজের পার্শ্ব রাস্তাটি ডুবে যাবার উপক্রম হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কাঁদা জমায় চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। রিকসা, ভ্যান, অটোরিকসা, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ছোট যানবাহন যাতায়াত করতে পরছে না। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। আসন্ন বন্যায় বিকল্প রাস্তাটি তলিয়ে গেলে এলাকাবাসীকে অতিরিক্ত নৌকা ভাড়া দিয়ে পার হতে হবে। আমরা পাঁচ ইউনিয়নের মানুষ এই ব্রিজের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কাজ বন্ধ করে দিয়ে ঠিকাদার গোলাম রব্বানী আজ পর্যন্ত এখানে আসেনি।


যাত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন- প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে ব্রিজের সামান্য কাজ করে বন্ধ রাখা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ যাত্রাপুরহাটসহ আশেপাশের অনেক হাট বাজারে পণ্য আনা-নেয়া প্রায় বন্ধের উপক্রম। ফলে এসব হাটবাজার থেকে সরকার রাজস্ব হারাতে বসেছে।


কুড়িগ্রাম শহরের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, বর্ষা মৌসুমে মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আমি ঠিকাদারকে বহুবার সেতু নির্মাণের কাজটি শুরু করার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু ঠিকাদার গোলাম রব্বানী কোনো গুরুত্ব না দিয়ে জানান, এখনো অনেক সময় আছে। তিনি আরো বলেন, নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করা না হলে প্রয়োজনে আমরা এলাকাবাসী মানববন্ধন করবো ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিবো।


এ ব্যাপারে সাব-ঠিকাদার গোলাম রব্বানী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিল না দেয়ায় কাজটি যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।


কুড়িগ্রাম এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি। ইতোমধ্যে কাজ সমাপ্তির সময় শেষ হলেও আবারো সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি বছরের ২ জুন কাজ সমাপ্তির দিন ছিলো। বারবার মৌখিকভাবে তাগাদা দিয়েও কাজ না করায় চিঠি দেয়া হয়েছে।


টেন্ডার বাতিল করে নতুনভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জনগণের দুভোর্গ নিরসনে যতো দ্রুত সম্ভব সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিল প্রদান সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী বিল প্রদান করা হয়।


কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপি আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণের দূর্ভোগ লাঘবে এলজিইডি’র প্রকৌশলীকে সেতুর নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এলজিইডি অতিসত্তর কাজটি সম্পন্ন করবে বলে জানিয়েছে।


বিবার্তা/বিপ্লব/অনামিকা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com