শিরোনাম
হেফাজতের আন্দোলনকে সমর্থন করে ‘ছাত্রলীগ নেতার’ পদত্যাগ!
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২১, ১৩:০৯
হেফাজতের আন্দোলনকে সমর্থন করে ‘ছাত্রলীগ নেতার’ পদত্যাগ!
সিলেট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনকে সমর্থন করে সিলেটের জকিগঞ্জে মো. হাফিজ মাজেদ নামের এক ছাত্রলীগ নেতা পদত্যাগ করেছেন। তিনি পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি। ২৭ মার্চ রাতে তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগ ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি। ২৯ মার্চ (সোমবার) বিকেলে দ্বিতীয় দফায় আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে তার পদত্যাগের যুক্তি খণ্ডন করেন।


তবে এ বিষয়ে জকিগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজ মাজেদ এখন ছাত্রলীগের কোনো দায়িত্বে নেই। তিনি প্রায় দুই বছর আগে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর প্রবাসে চলে যাওয়ার কারণে পদত্যাগ করেছেন। এখন কিভাবে হেফাজত ইস্যুতে পদত্যাগ করেছেন তার জানা নেই।


এদিকে মো. হাফিজ মাজেদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে জকিগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে লেখেন, মুসলিম জনতার মানবতাকে উপেক্ষা করে ভারতের ইসলাম বিদ্বেষী, সীমান্ত হত্যাকারী, কাশ্মীর দখলকারী, কসাই মোদিকে দেশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ও নামাজি মুসলমানদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘৃণ্যতম কাজের কারণে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।


তিনি আরো লেখেন, যে দল ইসলামকে সম্মান দিতে জানে না, বিশ্ব নবীর সুন্নতকে টানাটানি করে, যারা ভাস্কর্যকে হালাল মনে করে, মুসলমানদের ওপর হামলাকারী চা-বিক্রেতা মোদিকে দেশে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, সেই দলে কোনো মুসলমান থাকতে পারে না। তাই আমিও সেই দলে থাকতে পারি না। আজ থেকে বয়কট করলাম ছাত্রলীগ।


যদি কখনো বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ আদর্শ ছাত্রলীগের মধ্যে ফিরে আসে এবং তারা ভারতের দালালি চাটুকারি বাদ দেয়। দেশের আলেমসমাজকে সম্মান দেয় তখন চিন্তা করব যে পূনরায় সংগঠনটিতে ফিরে আসা যায় কি না। এর পূর্বে দালালদের সাথে আমি আর দালালিতে নেই।


এমন বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার পর থেকে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে। তৃণমূল ছাত্রলীগ নেতাদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।


তৃণমূল ছাত্রলীগের একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজপথের ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে ও অবমূল্যায়ন করে ছাত্রলীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী ও অন্য দলের এজেন্টদেরকে পদপদবি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন ভূইফোঁড় সংগঠনের নামেও শিবির-ছাত্রদলসহ বিরোধী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে আওয়ামী ব্যানারের নিচে নিরাপদে স্থান করে দেয়া হয়েছে। সুযোগ পেলে তারাই সংগঠনকে বিতর্কের মাঝে ফেলে দেয়। পদপদবি দেয়ার সময় ত্যাগীদের বঞ্চিত করার কারণে বৃহৎ সংগঠনটি কঠিন সময়ে কলঙ্কিত হয়।


নেতারা আরো বলেন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন কমিটিসহ ওয়ার্ড কমিটিগুলোতেও অনুপ্রবেশকারী অসংখ্য পদধারী রয়েছে। এই অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে আছেন দলের কঠিন সময়ের পরীক্ষিত কর্মীরা। সুদিনে অনুপ্রবেশকারীরা সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকায় তাদের দাপটে প্রকৃত ছাত্রলীগ কর্মীরা খুবই অসহায়।


তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কতিপয় নেতা তাদের বলয় গড়তে বিরোধী সংগঠন থেকে আগত নেতাকর্মী দিয়ে বলয় বৃহৎ করে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছেন। বিরোধী সংগঠনের সমর্থকরাও তাদের প্রশ্রয়ে নিরাপদে আছেন। সিনিয়র নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডেও ক্ষোভ আছে অনেকের মনে। এখনই এদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করতে তৃণমূল কর্মীরা দাবি জানিয়েছেন।


তবে জকিগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, পৌরসভা ছাত্রলীগে কোনো অনুপ্রবেশকারী নেই। ওয়ার্ড কমিটিগুলোতে অনেক যাচাই বাছাই করে পদপদবি দেয়া হয়েছে। তবে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপে অনুপ্রবেশকারী আছেন বলে স্বীকার করেছেন।


উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দেলোয়ার চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, পৌরসভা ছাত্রলীগ আলাদা একটি ইউনিট তাই তারাই ভালো বলতে পারবে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি কেন পদত্যাগ করলেন। এরপরও বিষয়টি দুঃখজনক। এত ত্যাগী ছাত্রলীগ কর্মী থাকাকালে কিভাবে অনুপ্রবেশকারী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পায়। তা তারাই বলতে পারবে।


কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে তাৎক্ষণিক কেন্দ্রীয় কর্মসূচির খবর পাননি। তবে হেফাজতের হরতাল প্রতিহত করতে সারাদিন ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলেন। ছাত্রলীগের তৎপরতার কারণে জকিগঞ্জের কোথাও হেফাজত কর্মীরা পিকেটিং করতে পারেনি। জকিগঞ্জ ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।


উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি বাবর হোসাইন চৌধুরী বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি পালন না করার কারণে ত্যাগীরা অভিমানে নীরব হয়েছেন।


ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের ব্যর্থতার কারণেই অনুপ্রবেশকারীরা কেন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়। হেফাজতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গত ২৭ মার্চও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিল কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগ তা বাস্তবায়ন করেনি। পরে তৃণমূল ছাত্রলীগ বিক্ষোভ করেছে।


ছাত্রলীগের কমিটিতে পদপদবি নিয়ে সুবিধাভোগীরা বসে থাকলেও সরকার বিরোধীদের নানা ইস্যুতেও তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও নীরব ভূমিকায় থাকেন। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই। নতুন কর্মী সংগ্রহ না করেই আগতদের লালন পালন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com