শিরোনাম
ঠাকুরগাঁওয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে উচ্ছেদ করা ১৫০ পরিবার
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২০, ১৫:০৫
ঠাকুরগাঁওয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে উচ্ছেদ করা ১৫০ পরিবার
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দেড়মাস পেড়িয়ে গেলেও এখনো মাথা গোজার ঠাঁই মেলেনি রেল প্রশাসন কর্তৃক গুড়িয়ে দেয়া ঠাকুরগাঁও রেল ষ্টেশনের ধারে বসবাস করে আসা ১৫০টি পরিবারের। যার কারণে বৃষ্টির পানিতে ভিজে জবুথবু হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পলিথিন মুড়িয়ে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা।এদিকে শুরু হয়ে গেছে শীতের আনাগোনা। এ অবস্থায় পরিবারের শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে ওইসব পরিবারের সদস্যরা।


জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনের জায়গা থেকে আবাসিক ভাবে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। এতে ঠাকুরগাঁও রেল স্টেশনের আশে পাশে গড়ে ওঠা তালিকাভুক্ত ১৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে।


পূনর্বাসনের বন্দোবস্ত না করে এভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করায় সেসময় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকে এগিয়ে যান তাদের সাহাযার্থে, প্রদান করেন নিত্য প্রয়োজনীয় চাল-ডাল-আলু ইত্যাদি। এদিকে উপায়ন্তর না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই গুড়িয়ে দেওয়া ধ্বংসস্তুপের মাঝেই পলিথিন ও প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে কোনরকমে রাত্রিযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।


তবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দূ:খ-দূর্দশার কথা ভেবে অভিযানের ৩ দিনের মাথায় তাদের সাহায্যে চাল-ডাল খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মানবিক নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন। এসময় তিনি তাদের দু:খ-দূর্দশার কথা শোনেন এবং দ্রুত পূনর্বাসনের আশ্বাস দেন। কিন্তু দেড় মাস অতিবাহিত হলেও সেরকম কোন অগ্রগতি না দেখতে পেয়ে হতাশায় দিনযাপন করছে সেইসব পরিবার।


শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাতে রেলষ্টেশন সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সত্তোর্ধ লাল মিয়া একটি পলিথিন মোড়ানো ঝুপড়ির মধ্যে শুয়ে রয়েছেন। কারোও গলার আওয়াজ পেলে চোখ মেলে তাকিয়ে একটিই অনুরোধ জানান বাবারা আমাদের বাঁচার একটা গতি করে দেও, আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করবে।


পাশেই আরেক পলিথিন মোড়ানো ঘরে বাস করেন বয়োবৃদ্ধ হাসমত ও ফজিরন। ক্যামেরা ও লোকজন দেখে তারা প্রথমে ঘাবড়ে যান, এই বুঝি তাদের তাড়িয়ে দিতে এসেছে কেউ।অনেকটা ভয়ে ভয়ে বললেন বাবারা আমাদের যাওয়ার তো কোন জায়গা নাই, তাই এখানেই কোনমতে পড়ে আছি। ইউএনও স্যার আসছিলো, আমাদের থাকার জায়গা দিতে চাইছে-জায়গা পেলেই আমরা চলে যাবো।


একটু দুরের ফাঁকা অন্ধকারে মিটিমিটি আলো জ¦লছে দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় একটা ছোট্ট পলিথিন মোড়ানো ঝুপড়িতে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসে রয়েছেন পরিবার প্রধান মিলন মিয়া। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি পেশায় অটোচার্জার চালক। দিনে অন্যের গাড়ী ভাড়া নিয়ে চালিয়ে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনরকমে সংসার চলে।রেলের উচ্ছেদ অভিযানে নি:স্ব হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে সে ও তার পরিবার।


তার মতে দেড়মাস ধরে বৃষ্টিতে ভিজে এখানে পড়ে আছি, এদিকে শীতের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। শীঘ্রই যদি তাদের পূণর্বাসন না করে সরকার তাহলে এই শীতেই এখানকার অনেক বয়োবৃদ্ধের মৃত্যু ঘটবে। তাই তিনি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


শুধু লাল মিয়া, ফজিরন বা মিলন মিয়া নয় এমন দূর্দশায় রয়েছে উচ্ছেদ হওয়া দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের ১৫০টি পরিবারের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ।


এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পৌরসভাধীন ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুদ্দৌলা সাহেব জানান, উচ্ছেদ অভিযানের দিন থেকে এসব অসহায় পরিবারদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে আসছি।তারা নিদারুন কষ্টে দিনযাপন করছে। আমি জেলা আ’লীগের সভাপতি মুহম্মদ সাদেক কুরাইশীর পরামর্শে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এই ১৫০টি পরিবারের পূণর্বাসনের জন্য খাসজমি বন্দোবস্তের আবেদন করেছি। আশাকরি খুব শীঘ্রই আমরা এসব পরিবারের দু:খ-দূর্দশা লাঘব করতে পারবো।


এ বিষয়ে জানতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উচ্ছেদ অভিযানের পরপরই আমি সেখানে গিয়েছিলাম, তাৎক্ষণিক খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি। এছাড়াও তাদের পূণর্বাসনে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করি খুব অল্প সময়েই তাদের পূণর্বাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হবে।


বিবার্তা/বিধান/এসএ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com