শিরোনাম
পরিচয় মিলেছে পুড়িয়ে ফেলা সেই মরদেহের
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২০, ০৮:২০
পরিচয় মিলেছে পুড়িয়ে ফেলা সেই মরদেহের
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থল বন্দরে কোরআন অবমাননার অভিযোগ পিটিয়ে হত্যা পর পুড়িয়ে ফেলা ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। শহিদুন্নবী জুয়েল নামের ওই ব্যক্তির বাড়ি রংপুর শহরের শালবান এলাকায়। জুয়েল রংপুর ক্যান্ট পবলিক স্কুলের সাবেক লাইব্রেরিয়ান বলে জানা গেছে। তার বাবার নাম আবদুল ওয়াজেদ মিয়া।


উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের আগে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে কোরআন অবমাননার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর ওই লাশ পুড়িয়ে ফেলে বিক্ষুপ্ত জনতা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় উত্তেজনা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি করেছে। এদিকে ঘটনার পর যুবকের মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়া হয়। আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তাড়া করে সরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।


স্থানীয় কয়েকজন জানান, দু’জন ব্যক্তি আসরের নামাজের সময় মসজিদে ঢোকে। নামাজ শেষে তারা ‘মসজিদে অস্ত্র আছে’ বলে দাবি করে। এ সময় তারা কোরআন ফেলে দেয় ও অবমাননা করে। এমন অভিযোগে একজনকে ধরে পিটিয়ে হত্যা করে আগুনে পুড়ানো হয়। অপরজন পালিয়ে যায়।


বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আসরের নামাজ শেষে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দুই জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি আসেন। মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের একজন মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে কোরআন-হাদিসের বই রাখার তাকে অস্ত্র আছে বলে তল্লাশি শুরু করেন।


এক পর্যায়ে মসজিদের সামনে থাকা ৫-৬ জন মুসল্লি মসজিদের প্রবেশ করে ওই ব্যক্তিকে এবং বারান্দায় থাকা অপর ব্যক্তিকে মারধর করেন। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষের ভেতরে ঢুকে তালা লাগিয়ে রক্ষার চেষ্টা করি। তবে মুহূর্তে শত শত লোকজন জড়ো হতে থাকে।


আমি ও স্থানীয় রফিকুল ইসলাম প্রধান নামে এক ব্যক্তি পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত, ইউএনও কামরুন নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নেওয়াজ নিশাতকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলি।


এরই মধ্যে উত্তেজিত জনতা কারো কথা না শুনে পরিষদের দরজা-জানালা ভেঙে এক ব্যক্তিকে বাইরে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ নিয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের বুড়িমারী প্রথম বাঁশকল এলাকায় কাঠখড়ি ও পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সেখানে ৫-৬ হাজার উত্তেজিত মানুষ ছিলো, কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিলো না।’


তিনি আরো বলেন, ‘আমরা লোক দুই জনের সঙ্গে কথা বলার সময় পাইনি। তাই পরিচয় নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমন কি তাদের ধর্ম সম্পর্কেও জানা সম্ভব হয়নি।’


বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি আসরের নামাজ শেষ করে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পাই খাদেম জুবেদ আলীকে দুই জন অপরিচিত ব্যক্তি সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করে কথা বলছিল। এরপর তারা মসজিদের ভেতরে ঢুকে যায়। আমিও চলে যাই। পরে ঘটনার কথা এসে শুনেছি। কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানি না।’


ওই মসজিদের খাদেম জুবেদ আলী বলেন, ‘আমাকে র‌্যাব ও আর্মির পরিচয় দিয়ে বলা হয় যে, কোরআন ও হাদিস রাখার তাকে নাকি অস্ত্র আছে। এ কথা বলে তাদের একজন খোঁজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সবকিছু তছনছ করেন। এসময় মসজিদের বাইরে অবস্থানরত হোসেন আলী (৩৫) নামে এক মুসল্লিসহ ৫-৬ জন মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে দুই জনকে আটক করে বাইরে নিয়ে আসেন। মসজিদের বারান্দার সিঁড়িতে প্রথম দফায় তাদের মারধর করা হয়। পরে হাফিজুল ইসলাম মেম্বার এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না।’


বিবার্তা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com