শিরোনাম
ইউএনও'র উপর হামলার প্রধান আসামি আসাদুল না রবিউল?
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:২২
ইউএনও'র উপর হামলার প্রধান আসামি আসাদুল না রবিউল?
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার প্রধান আসামিআসাদুল না রবিউল এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতার হওয়া ইউএনও'র বাসার মালি রবিউল ইসলাম ফরাস।


দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় এক প্রেস ব্রিফিং এ তথ্য জানিয়েছেন রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এই হামলায় ব্যবহত হাতুড়ি এবং মঈ স্বীকারোক্তি মতো উদ্ধারও করা হয়েছে।


এদিকে এই মামলায় শনিবার বিকেল ৫ টায় রবিউল ইসলাম ফরাসকে সিনিয়র জুটশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটইসমাইল হোসেনের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি ইমাম আবু জাফর। বিচারক মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।


অন্যদিকে ইউএনও'র উপর হামলা মামলার প্রধান আসামি যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা আসাদুল হককে সাত দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় প্রথম গ্রেফতারকৃত আসাদুলের স্বীকারোক্তি মতো র‌্যাব-১৩ ঘটনার দু’দিন পর ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাদের সদর দফতরে এক প্রেস ব্রিফিং এ জানায়, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনা নিছক চুরির ঘটনা থেকে। চুরি করতে বাধা দেয়ায় চোর আসাদুল হক এবং তার ওপর দুজন সঙ্গী নবীরুল ইসলাম এবং সান্টু কুমার এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সেই সময় আসাদুলের স্বীকারোক্তি মতো, ঘটনার সময় সিসিটিভি ফুটেজে পরিহিত আগন্তুকের লাল রঙের টিশার্ট উদ্ধার করা হয়েছে আসাদুলের বাড়ি থেকে। এমনি তথ্য জানায় র‌্যাব। শুধু তাই নয়,আসাদুলের স্বীকারোক্তি মতোই রংমিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম এবং সান্টু কুমারকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তিন জনকে আদালতের মাধ্যমে সাত দিন করে প্রত্যেককে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। কিন্তু, মামলার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ে পুলিশ। ফলে ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে কমপক্ষে কুড়িজনকে আটক করে আইন শৃংখলা বাহিনী। অধিকাংশ জনকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।


তবে, সিসিটিভি ফুটেজ এবং চলনের গতি এবং চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে সন্দেহের জালে পড়ে রবিউল ইসলাম ফরাস। ফরাসের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলা বিজোড়া ইউনিয়নের বিকোড়া গ্রামে। তার বাবা নাম খতিব উদ্দিন। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হওয়া রবিউল ইসলাম ফরাস অবশেষ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ তার স্বীকারোক্তি মতো একটি পুকুর থেকে হামলার অস্ত্র হাতুড়ি এবং ব্যবহত মই উদ্ধার করেছে। তাই, মামলাটির অগ্রগতির আশার আলো দেখছে পুলিশ।


পুলিশের আইজির পরামর্শে পুলিশ এই মামলাটির অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে।


আজ বিকেলে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্রাচার্য জানান, রবিউলের স্বীকারোক্তি মতে, এই ঘটনাটি সে ঘটিয়েছে। তার কথা মতো হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি ও মই উদ্ধারও হয়েছে। তাই আসামি রবিউলকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। যেহেতু এই মামলার বাদি ইউএনও’র ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিন মামলায় আসামির নাম উল্লেখ করেননি। এ কারণে মামলার প্রধান আসামি পরিবর্তন হওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে। রবিউল ইসলামকে আজ আদালতে রিমান্ড চেয়ে হাজির করার সময় একটি নির্দেশিকা আবেদন দিয়েছে। সেখানে প্রধান আসামি হিসেবে এখন স্বীকারোক্তি মতো ররিউল ইসলার ফরাসই হচ্ছে।


তাই রবিউল ইসলাম ফরাসকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণের আগে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। প্রেস ব্রিফিং এ রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ছাড়াও দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম এবং পিপিএম ( বার),ইউএনও ওয়াহিদা খানম হত্যা প্রচেষ্টা চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম আবু জাফর সহ অন্যান্য পুলিশ ককর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ৫০ হাজার টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনায় মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে চার মাস আগে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে রাখা হয়।


সিসিটিভির ফুটেজ এবং সাময়িক বরখাস্ত ঘটনার বিবেচনায় মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরে স্বীকারোক্তিতে সে ঘটনার সবকিছু জানায়।


জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রবিউল ইসলাম ফরাস ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে ২০১৯ সালের শেষে অস্থায়ী মালি হিসেবে নিয়োগ পায়। চার মাস আগে মালি রবিউল ইসলাম ফরাস ইউএনও ওয়াহিদার বাসা থেকে একটি লাগেজ ইউএনও কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার সময় সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা খোয়া যায়। এ ঘটনাটি ইউএনও ওয়াহিদা জেলা প্রশাসককে জানালে জেলা প্রশাসক মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। ফরাসের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে।


উল্লেখ্য, ২ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের উপর হামলা করে হত্যার প্রচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় আহত দু' জনকেই রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ইউএনও ওয়াহিদাকে এয়ার এম্বুল্যান্স করে নেয়া হয় ঢাকার নিউরোসাইন্স মেডিকেল হাসপাতালে। এর পর জরুরি ভিত্তিতে করা হয় অস্ত্রোপচার। এখনো তিনি সেখানে চিকিৎসকধীন।


তিনি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকধীন তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ সুস্থ হলেও তার কোমরের নিচের অংশ এখনও অবশ রয়েছে।


অন্যদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার প্রত্যাহারকৃত ঘোড়াঘাট থানার ওসি মো. আমিরুল ইসলামকে পুলিশ লাইন্সে রাখা হয়েছে। তার স্থলে ঘোড়াঘাট থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রংপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর মো. আজিম উদ্দিনকে। মামলার অগ্রগতিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে পুলিশ।


বিবার্তা/শাহী/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com