শিরোনাম
বিলুপ্তির পথে গরু দিয়ে হালচাষ!
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২০, ১৭:২০
বিলুপ্তির পথে গরু দিয়ে হালচাষ!
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক চৈত্র-বৈশাখে আউশ, আষাঢ়-শ্রাবন আমন, পৌষ মাঘ মাসে বোরো মৌসুম এলেই প্রতিদিন ভোরে বেরিয়ে পড়তেন মাঠে লাঙ্গল জোয়াল, গরু নিয়ে জমি চাষের জন্য। এক সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনের কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙতো লাঙ্গল জোয়াল হালের গরুর মুখ দেখে। তাছাড়া গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ করতো কৃষকরা। এখন আর তাও চোখে পড়ে না। এখর নতুন প্রযুক্তি ধান মাড়ানোর যন্ত্র দিয়ে কৃষকরা ধান ঘরে তোলে।


কাঠমিস্ত্রির বাড়িতে ভিড় জমে থাকতো লাঙ্গল, জোয়াল, আর মই মেরামত করার জন্য। মেরামত না করতে পারলে ওই দিন আর হালচাষ করতে পারতো না চাষিরা। বর্তমানে কাঠমিস্ত্রির বাড়িতে সেই আগের মতো ভিড় আর নেই। কাঠমিস্ত্রিদের সংসার চলতো কৃষকদের উপর নির্ভর করে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি এগিয়ে যাওয়ায় তারা এখন ফার্নিচারের দোকান দিয়ে বা অন্যের দোকানে কাজ করে সংসার চালায় তারা।


বর্তমানে বাংলাদেশে কৃষি প্রযুক্তিতে এগিয়েছে তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনের ঘুম ভাঙে ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলারের শব্দে। জমিতে বীজ বপন অথবা চারা রোপণের জন্য জমির মাটি চাষ করার ক্ষেত্রে হাল ব্যবহার করে আর ওই মাটি গুড়িয়ে সমান করার জন্য মই ব্যবহার করা হতো আর মইয়ের মাঝে উঠত শিশু বাচ্ছারা। যা কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত অন্যতম পুরনো যন্ত্র। এই কৃষিজমি চাষ করে উপযোগী করার জন্য গরু, মহিষ প্রয়োজন হতো।


লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ করতে কমপক্ষে একজন লোক ও দুটি গরু অথবা দুটি মহিষ প্রয়োজন ছিল। হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙ্গল জোয়াল, মই, গরু এবং মহিষ। উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক শহীদ মিয়া জানান, ১০ -১২ বছর আগে ময়মনসিংহ বা পার্শ্ববর্তী জেলা নেত্রকোনায় প্রায় প্রতি বাড়িতে ছিল গরুর হালের প্রচলন। গরুগুলো যেন পরিবারের সদস্যের মতো ছিল। তাদের দিয়ে একরের পর একর জমি চাষ করা হতো।


তাজা ঘাস আর ভাতের মাড়, খৈলের ভুসি ইত্যাদি খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তুলতো হালের জোড়া বলদকে। সেগুলো দিয়ে জমি চাষ করতেন কৃষক। এখন গৌরীপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নসহ একটি পৌরসভায় প্রায় প্রতিটি গ্রামে থাকা জমিগুলোতে কৃষক লাঙ্গল জোয়াল, মই ও গরু নিয়ে জমি চাষাবাদ করে না। চাষের মৌসুমে তাদের কদর ছিল অনেক।


উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের ধেরুয়া কড়েহা গ্রামের কৃষক মঞ্জিল মিয়া জানান, অনেকের সিংহভাগ সময় কেটেছে চাষের লাঙ্গল জোয়াল আর গরুর সঙ্গে, গরু দিয়ে হালচাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো, পায়ে হাটলেও ঘাসগুলো মাটিতে মিশে যেত। এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো, এ জন্য ফসলও ভালো হতো।


বর্তমান সরকার আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কৃষি ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার বলেন, কম সময়ে জমি চাষ করতে গিয়ে পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর ব্যবহার হচ্ছে যা মাটির গভীরে যেতে পারে।


ট্রাক্টর বা টিলার দিয়ে কম সময়ে জমি চাষ করা যায় তাই কৃষকরা হালচাষ বাদ দিয়ে নতুন পথে এগিয়ে যাচ্ছে এমনকি প্রত্যক এলাকার কৃষক সমিতির মাধ্যমে কৃষকদের টিলার, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে কৃষকের সুবিধার জন্য। এই সুযোগ সুবিধার জন্য কৃষক গরু দিয়ে হাল-চাষ করা ছেড়ে দিয়েছে।


বিবার্তা/কবির/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com