শিরোনাম
দানের টাকায় উপজেলা পর্যায়ে প্রথম করোনা হাসপাতাল
প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২০, ১৮:৩২
দানের টাকায় উপজেলা পর্যায়ে প্রথম করোনা হাসপাতাল
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মহামারি করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশের স্বাস্থ্য সেবার চলমান বেহাল অবস্থায় সাধারণ মানুষের মাঝে দিনদিন অসহায়ত্ব বাড়ছে। এমন সময়ে আশার আলো জেগেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দাদের মনে। বৃহত্তর এ উপজেলায় স্থানীয়দের দানের টাকায় গড়ে উঠছে কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল। যা দেশে উপজেলা পর্যায়ে গড়ে ওঠা প্রথম এবং একমাত্র কারোনা হাসপাতাল। ইতোমধ্যে হাসপাতালের অধিকাংশ কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী ২৭ জুলাই এটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে বিরামহীন কাজ চলছে।


সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় সাত লাখ মানুষের বসবাস বৃহত্তর ফটিকছড়ি উপজেলায়। করোনাকাল শুরু হলে এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। ফলশ্রুতিতে গত ৮ জুন স্থানীয় সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী উপজেলা সদর বিবিরহাটে অবস্থিত ২০ শয্যা হাসপাতালটিকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন। সরকারের তিনতলা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ২০০৭ সালে নির্মাণের পর থেকে জনবল নিয়োগ না হওয়ায় অচল ছিল। পরিত্যক্ত এ হাসপাতাল ভবনটি সংস্কার করে সম্পূর্ণ কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তরে কোটি টাকার প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশাল অঙ্কের এ অর্থ সংগ্রহসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সায়েদুল আরেফিনকে প্রধান সমন্বয়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তিনি এই কোভিড হাসপাতাল গড়তে প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানের বিষয়ে স্থানীয়দের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।


এরপর থেকে আপামর জনগণ প্রতিদিনই নগদ অর্থ কিংবা বিভিন্ন উপকরণ-যন্ত্রপাতি সহায়তা প্রদান করছেন। স্থানীয় সাংসদ থেকে শুরু করে দানশীল ব্যক্তি, বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা হাসপাতালটি গড়তে অনুদান প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। বিশেষ করে স্থানীয় প্রবাসীরা; চলমান বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা নিজেদের এলাকার কল্যাণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন। ব্যাচ ভিত্তিক এগিয়ে আসছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। অনেকে নিজের টিউশনির টাকাও দান করছে। স্বপ্নের কোভিড হাসপাতাল গড়তে নিজেদের জমানো টাকা দান করছে শিশুরাও। অনুদান দিয়েছে অতি নিম্নআয়ের চা শ্রমিকরাও।


উদ্যোক্তারা জানান, ৩০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালটি গড়ে তোলা থেকে পরবর্তী ছয়মাস পরিচালনা বাবদ তিন কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের আপদকালীন ফান্ডে এ হাসপাতাল বাবদ অনুদানের টাকা এক কোটি ২৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এছাড়া ৭৫ লাখ টাকা মূল্যমানের মেডিকেল ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি অনুদান এসেছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ হাসপাতালটিতে থাকছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, হাই ফ্লু ন্যাসাল ক্যানুলাসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা। থাকবে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও। রোগীদের চিকিৎসা দিতে থাকবেন ছয়জন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক, ১৫ জন নার্স এবং ২০ জন সেচ্ছাসেবক। গত ২১ জুন স্থানীয়দের অর্থে অস্থায়ীভাবে হাসপাতালটি চালানোর অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ। ২৮ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ এটি পরিদর্শন করে সন্তোষ জানিয়ে দানের টাকায় উপজেলা পর্যায়ে এমন হাসপাতাল গড়ে তোলা বিরল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন এবং সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন।


এদিকে হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচও) নাবিল চৌধুরী আহ্বায়ক ও ডা. জয়নাল আবেদীন মুহুরীকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এটির দেখভাল করবেন। হাসপাতাল বাস্তবায়ন কার্যক্রমে সার্বিক সহায়তা করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ.এম আবু তৈয়ব ও ফটিকছড়ি পৌর মেয়র ইসমাইল হোসেন।


হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়েদুল আরেফিন বলেন, ফটিকছড়ির লোকজন অত্যন্ত মানবিক। দলমত নির্বিশেষে সবাই এগিয়ে এসেছে বলেই এ বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে। এ হাসপাতাল গড়তে শুরু থেকে তারা যেভাবে সাড়া দিয়েছে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।


প্রধান উদ্যোক্তা সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি বলেন, মানবিক বোধ থেকে এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে এই উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষায়িত এ হাসপাতালে প্রতিমাসে আনুষঙ্গিক খরচ পড়বে প্রায় ৩৫ লাক টাকা। যার পুরোটাই নির্ভর করছে বেসরকারি সহায়তা এবং জনগণের দানের টাকা উপর। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন সাংসদ।


বিবার্তা/ফয়সাল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com