শিরোনাম
করোনায় শঙ্কিত কুষ্টিয়ার ৩৪ হাজার গোখামারী
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২০, ১৬:১১
করোনায় শঙ্কিত কুষ্টিয়ার ৩৪ হাজার গোখামারী
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা গ্রামের আলমগীর হোসেন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কোরবানীর জন্য গরু পালন করে আসছেন। প্রতি বছর কম বেশি লাভের মুখও দেখেন তিনি। গরু পালনের মাধ্যমে সংসারে সুদিন ফিরিয়েছেন এই খামারী। এবার কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে তিনি নয়টি গরু লালন পালন করেছেন। তবে এবারের ঈদ সামনে রেখে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আলমগীরের। করোনার কারণে দেশের টালমাটাল অবস্থায় গরু বিক্রি করে লাভ তো দূরে থাক আসল ফেরত আসবে কিনা তা নিয়ে ঘুম হারাম হয়ে গেছে তার।


দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর এলাকার বকুল হোসেন প্রায় ৩২ মন ওজনের একটি গরু পালন করেছেন, যার নাম দিয়েছেন বিগবস। কোরবানীর সময় সে বিগবসকে বিক্রি করে সংসারের সুদিন ফেরাবে। কিন্তু সে আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। করোনার কারণে কেউ কেনাতো দূরের কথা কেউ খোঁজখবরও নিচ্ছেনা। একই অবস্থা চকদৌলতপুরের সাইদুল ইসলাম মেম্বরের। সে ১১টি গরু পালন করেছেন। এখনো পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রয় হয়নি। শুধু আলমগীর হোসেন, বকুল হোসন বা সাইদুল ইসলাম মেম্বার নয় একই অবস্থা জেলার ৩৪ হাজার গোখামারীর।


বেশ কয়েক বছর ধরে কোরবানীর বাজারে কুষ্টিয়ার গরুর আলাদা কদর বা চাহিদা রয়েছে। এ কারণে এ জেলায় দিন দিন গরু পালনে ঝুঁকছেন মানুষ। জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের হিসেব মতে জেলায় এবার প্রায় এক রাখ পাঁচ হাজার গরু পালন করা হয়েছে কোরবানীর জন্য। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার। ছাগল পালন হয়েছে ৭০ হাজার।


জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সিদ্দীকুর রহমান বলেন, এখানে উৎপাদিত গরুর ৩০ ভাগেই স্থানীয় মানুষের চাহিদা মিটে যায়। বা ৭০ ভাগ গরু চলে যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে। তবে এবার করোনার কারণে গরুর বাজার অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে। এতে করে খামারীরা বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে।


খামার মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতি বছর তিনি বড় সাইজের গরু পালন করেন। তার খামারের গরু ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজারে প্রতিটি ৫ থেকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। ঈদের দেড় মাস আগে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে ব্যাপারীরা হয় ফোনে অথবা সরাসারি যোগাযোগ করে গরু কিনে নিত। তবে এবার ঈদ এগিয়ে আসলেও কোনো ব্যাপারী তার সাথে যোগযোগ করেনি। এতে তার মনে মারাত্মক শঙ্কা দেখা দিয়েছে।


তিনি বলেন, এবার হয়তো গরু বেচে আসল টাকাও উঠবে না। কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রামের খামার মালিক সোহেল রানা বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরু পালন করেছি। গরুর খাবার গমের ছাল, ভুষি, বিচুলির দাম নাগালের বাইরে। এই অস্থায় গরু পালন করে এখন তিনি বড় ধরণের লোকসানের মুখোমুখি। তার চিন্তা ব্যাংক ঋণ শোধ দেবেন কি করে।


সদর উপজেলার আইলচারার লিপি খাতুন দুটি গরু পালন করেছেন। কথা ছিল তার স্বামী এই গরু ঢাকার গাবতলী হাটে নিয়ে যাবেন। কিন্তু করোনার ভয়ে তিনি ঢাকা যেতে চাইছেন না। তাই গরু কোথায় কিভাবে বিক্রি করবেন তা নিয়ে চিন্তাই পড়ে গেছেন লিপি খাতুন।


তবে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন অনলাইনের মাধ্যমে গরু বিক্রির মাধ্যম হিসেবে গোখামারীদের দুর্ভোগ লাঘবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। জেলা প্রশাসক জানান, ইতিমধ্যে একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। সেখানে অনেক খামারী তাদের গরুর ছবি, ওজন ও প্রত্যাশিত দাম উল্লেখ করে পোষ্ট দিচ্ছেন। এ মাধ্যমে এরই মধ্যে কয়েকটি গরুর বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি খামারীরা যাতে নির্বিঘ্নে গরু নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামের হাটে যেতে পারে সে ব্যাপারে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে আসলাম হোসেন জানান।


বিাবর্তা/শরীফুল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com