শিরোনাম
কর্ণফুলীর ডাঙারচর-সল্টগোলা ঘাট
উদ্দেশ্য মহৎ কিন্তু এ টাকা গেলো কোথায়?
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২০, ২২:১৮
উদ্দেশ্য মহৎ কিন্তু এ টাকা গেলো কোথায়?
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সল্টগোলা-ডাঙ্গারচর ঘাটটি কোনো ধরনের ইজারা না নিয়ে সুকৌশলে দু'মাস নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি সিন্ডিকেট গ্রুপের কিছু অসাধু ব্যক্তির বিরুদ্ধে।


ঘাটটির সল্টগোলা অংশ নগরীর শহরকুল ও ডাঙারচর অংশ দক্ষিণকুল কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের অধীন।


কর্ণফুলীর ডাঙ্গারচর-সল্টগোলা ঘাট মূলত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে ইজারায় নিয়ে পরিচালনা করার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির সুযোগে একদল সুযোগ সন্ধানী লোক অবৈধ উপায়ে ঘাট পরিচালনা করে নিজেদের আখের গোছাতে কাজ সেরেছেন।


জানা গেছে, সারাদেশে যখন করোনায় গণপরিবন থেকে শুরু করে নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল তখন দুগ্ধ খামারীদের দুর্যোগের কথা চিন্তা করে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন কিছু শর্তজুড়ে দিয়ে ডাঙ্গারচরের এ ঘাটটি সীমিত আকারে শর্তসাপেক্ষে পরিচালনার অনুমতি দেয়। অনুমতির উছিলায় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চক্রটি ঘাট পরিচালনা করে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া অব্যাহত রেখেছে।


করোনা ভাইরাসের লক ডাউনকালে অনুষ্ঠিত উপজেলার সমন্বয় সভায় প্রায় আটশত দুগ্ধখামারের দুধ সরবরাহের সুবিধার্থে জুলধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদের অনুরোধ ছিলো এ ঘাটে একটি বোট চালু রাখার। যাতে খামারের দুধ নগরীতে সরবরাহ করা যায়। চেয়ারম্যানের অনুরোধে সভায় শর্তসাপেক্ষে একটি বোট চালুর সিন্ধান্ত দেয়ার প্রমাণও পাওয়া যায়।


সভায় সকাল ৭টা থেকে ১১টা, বিকেল ৩টায় থেকে ৫টা মোট ৬ ঘন্টা সময় ঘাটে ১টি ইঞ্জিন চালিত বোট চালু রাখার সিন্ধান্ত হয়। এতে বলা হয়, সাধারণ লোকজন বোটে যাতায়াত করতে পারবে না। দুগ্ধখামারিরা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র ও বোট চালকের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে চলাচলের পাস নিয়ে, সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে পারাপার হবেন।


কিন্তু গত দুমাস যাবত একটি বোট চালু রাখার কথা বলে ঘাটে একাধিক বোট সচল রেখে গাদাগাদি করে অর্ধশতাধিক যাত্রী ও মালামাল বহনসহ নিয়মিত ঘাট চালু রেখেছেন।


আরো অভিযোগ উঠেছে, এক শ্রেণির অসাধু কিছু মুনাফালোভী ব্যক্তি জুলধার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে দৈনিক তিন হাজার টাকা পরিশোধ করবেন এমন চুক্তিতে (মৌখিক) জুলধা এলাকার দুই গ্রুপের ১০/১২ জনের সিন্ডিকেট অবৈধভাবে ঘাট নিয়ন্ত্রণে নেন। যদিও তখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ডাঙারচর সল্টগোলা ঘাটটি ইজারা ডাক হয়নি। তবে প্রক্রিয়াধীন বলে জানা যায়।


বর্তমানে এলাকার লোকজন দাবি করছে, গত দু'মাসে দৈনিক তিন হাজার টাকা করে মোট এক লাখ ৮০ হাজার টাকা ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বদির মাধ্যমে জুলধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছে ঘাট নিয়ন্ত্রণে নেয়া সিন্ডিকেট গ্রুপ।


স্থানীয়দের দাবি, ঘাট হতে তোলা ওই অর্থ দিয়ে ডাঙ্গারচরের প্রধান সড়ক ও ঘাট সংস্কার করার কথা। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান এ বিষয়ে অনেকটা নীরব রয়েছেন। অথচ উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় চেয়ারম্যান দুগ্ধখামারিদের প্রতি দরদ দেখিয়ে মহৎ উদ্দেশ্যে ঘাটটি চালু করলেও এলাকার লোকজন এখন নানা প্রশ্ন তুলেছেন। দৈনিক জমা হওয়া টাকাগুলো তাহলে গেল কোথায়?


স্থানীয় একাধিক বোট মাঝিরা জানান, গত দুমাস যাবত ঘাট হতে আদায় হওয়া টাকা মেম্বারের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে দেড় লাখ টাকার উপরে জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখন চেয়ারম্যান বলছেন ওই টাকায় ঘাট সংস্কার করা হবে না। করোনা রোগীদের পিছনে খরচ করবেন বলে শুনতেছি। তবে হাবভাব দেখে মনেহচ্ছে তাও করবে না'।


এমন পরিস্থিতিতে জুলধার জনপ্রতিনিধিরা সুবিধা নিলেও বিষয়টির অন্ধকারে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।


তবে অসমর্থিত এক সূত্রে সর্বশেষ খবরে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশন অফিসের এক কর্মকর্তা ডাঙারচর ঘাটটি জুলধা ডাঙারচরের মনির আহমদ ও মো. ওসমান নামে দুব্যক্তি দৈনিক চার হাজার টাকা কিস্তিতে পরিচালনা করার সুযোগ দিয়েছেন। যা কর্পোরেশনও অবগত।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুলধা ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বদি জানান, চেয়ারম্যান ঘাট পারাপারে মানুষের কথা চিন্তা করে অনেক কষ্টে উপজেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে ঘাট চালু করলেও ওপারে সল্টগোলা ঘাটে বোট চলতে দেয়নি। পরে তাদেরও খরচপাতি দিয়ে মেনেজ করে চালু রাখতে হয়েছে। তবে চেয়ারম্যানের আন্ডারে বেশিদিন ছিলো না।


জুলধার ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, দৈনিক কিস্তিতে আমার অধীনে ঘাট চলেছে বলে আপনাদের এসব বাইক্ক্যা কথা কে বলেছে। আমি তো কোনো ঘাট ইজারা নিইনি। ঘাট এখন সিটি কর্পোরেশনের অধীনে চলে। আমি প্রশাসনকে বুঝিয়ে অনুমতি নিয়ে কিছুদিন চালু রেখেছিলাম লকডাউনে। তার কাগজপত্রও আছে।


কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী সাথে যোগাযোগ করে ফোনে পাওয়া না গেলেও ঘাটের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর স্টেট অফিসার মো. এখলাছ মিয়া বলেন, আগে কার মাধ্যমে সল্টগোলা ডাঙারচর ঘাট ছিলো বলতে পারব না। তবে এখন কর্পোরেশন ঘাটের রাজস্ব আদায় করে দৈনিক হিসাবে।'


কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি বোধগম্য নয়। এই ঘাটগুলো সিটি কর্পোরেশন হতে তো ইতোমধ্যে ই-টেন্ডারে ইজারা হওয়ার কথা। এখন কেন ইজারা হবে? উল্টো প্রশ্ন রাখেন তিনি।


বিবার্তা/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com