শিরোনাম
বরিশালে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:৩৮
বরিশালে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা
বরিশাল ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

বরিশাল বিভাগে শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এখানকার খেজুরের রস আহরণের গাছিরা। প্রত্যেক জেলা উপজেলায় ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের মধ্যে খেজুর গাছের রস সংগ্রহে নেমে পড়েন তারা। গ্রামীণ পথের পাশে সারি সারি খেজুর গাছে ঝুলতে থাকে রসের হাড়ি। ইতিমধ্যে গাছের ডাল পালা কর্তন ও আনুষঙ্গিক কর্ম সম্পাদন সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে সুমিষ্ট রস সংগ্রহের পালা।


গাছের মাথায় একই স্থানে অনেকখানি বাকল তুলে সেখানে হাড়ি বেঁধে নালার (বাঁশের তৈরি) সাহায্যে এ রস সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত বিকেলে গাছে হাড়ি বেঁধে রেখে যায় গাছিরা। আর প্রতিদিন ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে গাছ থেকে রসে ভরা হাড়ি নামানো হয়। পুরো এলাকা তখন কাচা রসের গন্ধে মৌ-মৌ করে। এসময় শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখিরা গাছে ভিড় করে রস খাওয়ার জন্য। এসব রসের হাড়ি মান ভেদে ৫০ থেকে ১০০টাকায় বিক্রি করা হয়।


জানা যায়, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সাথে খেজুরের রস ও শীতকাল একাকার হয়ে আছে। এখানে শীতের মূল উৎসবই হলো শীতের পিঠা। ঘরে ঘরে আসে নতুন ধানের চাল। সেই চালের গুড়ো দিয়ে তৈরি হয় হরেক রকম পিঠা। যার মূল উপাদন খেজুরের রস, গুড় ও পাটালী। আর শীতের সকালে রোদে বসে পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে?। তাই এসময় গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা ও পায়েস তৈরির ধুম পড়ে যায়। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই মেতে উঠে নতুন চালের পিঠা খাওয়ার উৎসবে।


গাছিরা জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। আগের চেয়ে খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই অনেকেই আগাম রসের জন্য গাছিদের কাছে অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেন রস সংগ্রহের জন্য। সেই টাকায় কেউ কেউ রস সংগ্রহের সরাঞ্জম ক্রয় করে এখন গাছ কাটায় মগ্ন। আবার কেউ কেউ পুরাতন দড়ি, দা, হাড়ি ও ঝুড়ি পরিচর্যা করছেন।


জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার গাছি জালাল মিয়া, লোকমান হোসেন, ফিরোজ মিজি ও শাহ আলম বলেন, অন্য মৌসুমে তারা বিভিন্ন ফসলের চাষ করেন। কিন্তু শীত এলেই তারা খেজুরের গাছ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ এ অঞ্চলে রসের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় ভালো টাকা লাভ হয়। এছাড়া খেজুরের গুড়েও বেশ কদর রয়েছে। তারা আরো জানান, তাদের নিজেদের কোন গাছ নেই। অন্যের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়। আর গাছের মালিককেও রসের একটা অংশ দিতে হয়। তারপরেও প্রতি বছর তারা রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হন বলে জানান।


যদিও এক সময় বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত খেজুর গাছ চোখে পড়ত। আবহমান বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের পথের দুপাশে শোভা পেত অসংখ্য খেজুর গাছ। সময়ের বিবর্তনে ও ইটভাটায় এর পর্যাপ্ত ব্যবহারের জন্য এখন আর আগের মতো খেজুর গাছ চোখে পড়ে না। দরিদ্র পরিবারগুলো অধিক লাভের আশায় ইটভাটায় খেজুর গাছ বিক্রি করে দিত। পরবর্তিতে বর্তমান সরকার ইটভাটায় গাছ পোড়ানো বন্ধ করাতে এখোনো বেশ কিছু খেজুর গাছ টিকে আছে ঐতিহ্যের সাথী হয়ে।


এদিকে শীতের সময় গ্রামের গাছি পরিবারগুলোর দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে যায়। বাড়ির উঠানের একপাশে স্তুপ করা থাকে ছোট বড় রসের অসংখ্য হাড়ি। পুরুষরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। আর মহিলারা বাড়ির উঠানে জলন্ত উননে মস্ত পাত্রে তা শোধন করেন। আর সারা দিন ধরে চলে রস শোধন পক্রিয়া। এর মাধ্যমে রসের মিষ্টি গুড় তৈরি করা হয়। আর গুর হচ্ছে পিঠা, পায়েশ ও নাস্তার প্রধান উপাদান। এসময় পুরো এলাকা খেজুরের রসের গন্ধে ভরে উঠে।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com