হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার জেআইসি স্যুট লিমিটেড শ্রমিকরা তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে ঢাকা-সিলেট অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
রবিবার (১২ এপ্রিল) সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। এসময় প্রায় দুই ঘন্টা মহাসড়কে জরুরী পণ্য সামগ্রী বহণকারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্ততায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি শহীদ কিবরিয়া চত্বর নিকটবর্তী সুন্দর নগর এলাকায় অবস্থিত জেআইসি স্যুট লিমিটেড গার্মেন্টস এর দুটি পোশাক কারখানা রয়েছে।
এসব কারখানায় হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়া অনেক শ্রমিককে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন প্রদান করা হয় এবং তাদেরকে প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টা অতিরিক্ত কাজ করিয়ে কোনো অতিরিক্ত বেতন প্রদান করা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়েও কোনো বেতন প্রদান করেনি জেআইসি স্যুট লিমিটেড গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।
এমনকি মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও গার্মেন্টস খোলা রাখে জেআইসি স্যুট লিমিটেড। পরে স্থানীয়দের তোপেরমুখে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করে (২৪ মার্চ ) হতে (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে।
গত ২৪ মার্চ বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। ৫ এপ্রিলের পর বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা আন্দোলন তোলে নেয়।
কিন্তু ৫ এপ্রিল অতিবাহিত হলেও গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দেয়া কথা রাখেনি। পরিশোধ করেনি শ্রমিকদের বকেয়া বেতন। শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের কাছে বকেয়া বেতনের জন্য ধরণা দিয়ে কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। উল্টো প্রতিনিয়তই শুনতে হচ্ছে আশ্বাসের বাণী। এরমধ্যে গার্মেন্টসের ছুটি বৃদ্ধি করে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ ঘোষণা করেছে জেআইসি স্যুট লিমিটেড গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ।
পরে রবিবার সকাল থেকে জেআইসি স্যুট লিমিটেড গার্মেন্টসের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে জড়ো হয় শ্রমিকরা। পরে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ৩ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ করে নারী-পুরুষ শ্রমিকরা। এসময় ২ ঘন্টা মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ থাকে। আটকা পড়ে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন।
জুবায়ের নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক বলেন, আমাদের তিন মাসের বেতন বকেয়া। করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালীন সময়ে আমাদের পরিবারে খাবারের সংকট। এমন মুহুর্তে আমাদের পাশে এসে দাড়ানোর বদলে আমারা হচ্ছি তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার। বকেয়া বেতন চাইলে শুনতে হচ্ছে শুধু আশার বাণী। আমাদের দুঃখ দুর্দশা কে বুঝবে আর কেইবা শুনবে!
সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গার্মেন্টস স্থলে পৌঁছায় । পরে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের সাথে প্রশাসন ও শ্রমিকদের দেড় ঘন্টা চলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শ্রমিকদের বেতন দ্রুত দেয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে পোশাক তৈরীকারক প্রতিষ্ঠান জেআইসি স্যুট লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।
এপ্রিলের মাসের শেষের দিকে ও মে মাসে দুই ধাপে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দেয়ার আশ্বাস দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ প্রশাসন গার্মেন্টস কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন। পরে শ্রমিকরা তাদের অবরোধ তোলে নেয় বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে পোশাক তৈরী কারক প্রতিষ্ঠান জেআইসি স্যুট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিবার্তা/ছনি/এসএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]