শিরোনাম
নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সাংবাদিক আরিফুল
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২০, ১৭:৪০
নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সাংবাদিক আরিফুল
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসনের একটি দল কীভাবে নির্যাতন চালিয়েছিলো তার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। জামিনে মুক্তির পর তাকে চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে নিজের ওপর চলা রাতভর নির্যাতনের বর্ণনা দেন।


রবিবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় তাকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় আরিফুলের জামিনের জন্য কোনো আবেদন করা হয়নি। তার জামিনকে ঘিরে সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভিন স্ব-প্রণোদিত হয়ে জামিনের ব্যবস্থা করেছেন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভিনসহ এ ঘটনা জড়িতদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ খবরে সাংবাদিকরা স্বস্তি প্রকাশ করলেও শুধু প্রত্যাহার নয়, দেশের প্রচলিত আইনে বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।


এদিকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে আমাকে আমার বাড়ির দরজা ভেঙ্গে আমাকে প্রথমে আঘাত করে আরডিসি। উনি আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত এবং চোখ বেঁধে ফেলেন। এরপর এনকাউন্টার দেয়ার কথা বলে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।


তিনি বলেন, আমি অনেক আকুঁতি-মিনতি করি এবং আমি আমার আল্লাহর কসম দেই। আমার সন্তানদের কসম দেই এবং আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই তাদের কাছে। এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না। আমাকে বার বার বলছিলেন কলমা পড়ে নে, কলমা পড়ে নে। এসময় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ পাড়তে থাকেন। এরপর কোন এক জায়গা থেকে ঘুরিয়ে আমাকে আবারও ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে কোন রকম হাত দিয়ে চোখের বাঁধন সরিয়ে দেখি যে আমি ডিসি অফিসে।


তিনি আরো বলেন, এরপর আমাকে আবার শক্ত করে চোখ বেঁধে আমাকে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে আরডিসি’র নেতৃত্বে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং নির্যাতন করা হয়। আরডিসি নিজেই আমাকে মার দিয়েছেন। আমাকে বিবস্ত্র করে আমার ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এরপর আমার কাছ থেকে চারটি স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে চোখ বাঁধা অবস্থায়। কিসের স্বাক্ষর নিয়েছে সেটা আমি এখন পর্যন্ত জানি না। এরপর তাড়াহুড়া করে তারা আমাকে কারাগারে নিয়ে যায়। আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার চিহ্ন আমার সারা শরীরে রয়েছে।


জামিনের আবেদন করেছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আসার পূর্ব পর্যন্ত যা হয়েছে সব আমার অজান্তে হয়েছে।


উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার পর জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আনসার সদস্যদের নিয়ে তার শহরের চড়ুয়া পাড়ার বাড়িতে যান। একপর্যায়ে জোরপূর্বক দরজা ভেঙে তার ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রী সন্তানের সামনেই তাকে মারধর করে ধরে নিয়ে যান।


এদিকে আহত অবস্থায় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের জামিন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরে জেলা প্রশাসকসহ জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাসপাতাল চত্ত্বরে আসেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় হাসপাতালে এসে জড়িতদের বিচারের দাবিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সহকর্মী সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যরা।


আরিফুলের বড় বোন শিক্ষিকা রিজিকা বেগম জানান, আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জামিনের কোনো আবেদন করা হয়নি। তারা আমার ভাইকে মারার উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। সাংবাদিকদের তৎপরতায় তা পারেনি। আমি আমার ভাইয়ের উপর নির্যাতনের বিচার চাই।


এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব জানান, সাংবাদিকরা আরিফুলের নি:শর্ত মুক্তির দাবী করে আসলেও আদালত ২৫ হাজার টাকা মুচলেকায় মামলাটি চলমান রেখে তার জামিন প্রদান করেন। এ অবস্থায় সাংবাদিক ও এলাকাবাসী আরিফুলের নি:শর্ত মুক্তিসহ মামলা প্রত্যাহার ও জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।


কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আই প্রতিনিধি শ্যামল ভৌমিক জানান, এ ঘটনায় মন্ত্রনালয় থেকে জেলা প্রশাসকসহ যে সব কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদের শুধু প্রত্যাহার করলে হবে না। সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং আরিফুলের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তা নাহলে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।


ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাংবাদিক নির্যাতন করে মামলা ও রহস্যজনক জামিন দেয়ার কারনে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার খবর পেয়ে জেলার মানুষ খুশী হলেও জেলা প্রশাসকসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।


বিবার্তা/সৌরভ/এসএ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com