শিরোনাম
নির্যাতিতা আসমানীর আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২০, ১৯:০৩
নির্যাতিতা আসমানীর আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামে চরম নির্যাতনের শিকার পিতৃহীন কিশোরী আসমানী এখন ঘুড়ে দাঁড়াতে চায়। বাঁচতে চায় নতুন করে। একটি কালো মেঘ তার জীবনকে তছনছ করে দিলেও প্রাথমিক ধাক্কা সামলিয়ে এখন সে স্বপ্ন দেখছে আকাশ ছোঁয়ার। তার এই স্বপ্ন দেখাতে হাত বাড়িয়েছেন কিছু হৃদয়বান মানুষ।


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের কাজলদহ গ্রাম।এই গ্রামের দিনমজুর আমজাদ হোসেন ও নাজমা বেগমের দু’কিশোরী সন্তানের মধ্যে আসমানী ছোট সন্তান। দুই বোন আর মাকে নিয়ে দিনমজুর বাবা তাদের অনেক কষ্টে মানুষ করছিলেন। সামান্য জমানো টাকায় বড় মেয়েকে পার্শ্ববর্তী রাজারহাট উপজেলায় বাল্যবিয়ে দেয়া হয়। পড়াশুনার শখ থাকায় আসমানীকে ভর্তি করানো হয় মাদ্রাসায়।এভাবেই চলছিল তাদের ডাল-ভাতের সংসার।


আসমানী যখন ৭ম শ্রেণিতে ওঠে তখন হঠাৎ করে মারা যান বাবা আমজাদ হোসেন। তার মৃত্যুতে মা নাজমা বেগমের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কিশোরী মেয়েকে নিয়ে তিনি চরম সংকটের মধ্যে পরে যান।এই অবস্থায় মায়ের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।দাদীর বাড়িতেই পড়াশুনা চলছিল আসমানীর।


চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেবর আশরাফুল ইসলাম পাশেই তার বাড়িতে মেয়েসহ নাজমা বেগমকে ডাকেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন আসমানীর বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। ছেলে একই ইউনিয়নের আলোরচর গ্রামের নবরুদ্দির পূত্র। নাম আলামিন।


আসমানীকে কিছু বুঝতে না দিয়ে মৌলভী দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ে অস্বীকার করে আসমানী। শ্বশুরবাড়ির লোকজন চেষ্টা করেও তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেনি। ফলে পরিবারের সবাই ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে চাচা আশরাফুল, মা, বোন ও দাদী তাকে বিভিন্নভাবে মারধর করে। একদিন ছেলেটি জোড় করে ঘরে ঢুকলে তার সাথে আসমানীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ছেলেটি আসমানীকে ওড়না দিয়ে বেঁধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। তার চাচা তাকে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকী দেয়। এতেও কথা না শোনায় ৯ হাজার টাকায় কবিরাজ এনে চিকন কঞ্চি দিয়ে আসমানীকে পেটানো হয়। এ ঘটনার পর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় মেয়েটি।


ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম জানান, আসমানী নামে নির্যাতিতা মেয়েটি গভীর রাতে আমার বাড়িতে এসে জানায় সে আর বাড়ি ফিরবে না। তাকে আশ্রয় না দিলে সে আত্মহত্যা করবে। আমি মেয়েটিকে আশ্রয় দিয়ে পরদিন তার অভিভাবকদের ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনি। সেখানে সালিশ বৈঠকে মেয়েটি জানায় তাকে বাড়িতে ফেরানোর চেষ্টা করা হলে সে জীবন দিয়ে দেবে। মেয়েটির নিরাপত্তার কথা ভেবে আসমানীকে নিজের বাড়িতে মেয়ে হিসেবে আশ্রয় দিয়েছেন চেয়ারম্যান শাহ আলম।


আসমানী জানায়, আমি পড়তে চাই। আরো জানতে চাই। আমাদের সমাজে মেয়েদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে তাদের জোড় করে বাল্যবিয়ে দেয়া হয়।এটা উচিত নয়।


বেসরকারি এনজিও এইড কুমিল্লার ডিস্ট্রিক ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, আমরা মেয়েটির সেফটির কথা চিন্তা করে তাকে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি।


তাৎক্ষণিকভাবে বইপত্র কেনার জন্য অর্থ সহযোগিতা করেছি। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনও তার দেকভালের দায়িত্ব নিয়েছেন।


ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, মেয়েটির নিরাপত্তার কথা ভেবে তার পরিবারের কাছে মুছলেকা নিয়ে ঘোগাদহ ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। মেয়েটির উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরা পাশে থাকবো।


বিবার্তা/সৌরভ/জাহিদ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com