যশোরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় পুলিশের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংঠনের নেতাকর্মীরা।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের শ্রদ্ধা জানানোর আগে কাউকে বধ্যভূমির বেদিতে ওঠতে বাধা দেন যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান। মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শনিবার সকালে যশোর শহরের চাঁচড়া বধ্যভূমিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এদিকে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী জুতা পায়ে বধ্যভূমির বেদিতে ওঠায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা জানান, এটি মন থেকে শ্রদ্ধা জানানো নয়। দায়সারা একটি কাজ।
যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, সকাল ৯টার আগে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো যাবে না এমন কোনো নির্দেশনার কথা জানা ছিল না। আমরা সাড়ে ৮টার দিকে ফুল দিতে গেলে পুলিশ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা এটাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে না। এ রকম একটি জাতীয় দিবসে প্রশাসনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ঠিক না।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন যশোর শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল বাশার বলেন, আমরা যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ ৫০/৬০ জন চিকিৎসক সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে বধ্যভূমিতে চলে যাই।কারণ মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা চলছে ও সকাল ৯টার মধ্যে আমাদের হাসপাতালে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু পুলিশের বাধায় আমরা সময় মতো শ্রদ্ধা জানাতে ব্যর্থ হই।এ কারণে আমাদের অনেকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে ফিরে যাই।
চিকিৎসক নেতা বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে এটা ঠিক নয়। জাতীয় কোনো দিবসে পুলিশের এ আচরণ ঠিক নয়। আমরা প্রশাসনের কাছে জিম্মি হতে পারবো না।
ছাত্রলীগ যশোর মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দেবনাথ বলেন, আমাদের ক্লাস ও ডিউটি ছিল।এ জন্য সকাল ৯টার আগে বধ্যভূমিতে পৌঁছে যাই। কিন্তু আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে দেয়া হয়নি। এসময় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম উদদ্দৌলা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভায় সকাল ৯টায় শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সকাল ৯টার আগে কেউ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন না সে সিদ্ধান্ত হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড যশোর সদর উপজেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল বলেন, জেলা প্রশাসনের আগে কাউকে ফুল দেয়া যাবে না- এরকম করা ঠিক হয়নি। যে যখন আসবে সে তখন ফুল দিয়ে যাবে। আর যখন প্রশাসন আসবে তখন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে।
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমার কাছে জিজ্ঞেস করছেন কেন? এটা সমন্বয় পরিষদের সিদ্ধান্ত। জেলা প্রশাসকের কাছে জিজ্ঞেস করেন। আমি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছি মাত্র।’
জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, ‘সকাল ৯টার আগে বধ্যভূমিতে কাউকে ফুল দিতে দেয়া হয়নি অথবা কেউ ফিরে গেছেন এটা জানা নেই। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনে জেলা প্রশাসক আয়োজিত প্রস্তুতিসভায় সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ছিল সকাল ৯টায় বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে।’
প্রায় ৮০টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পেশজীবী সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। অথচ এসব সংগঠনের অধিকাংশই জেলা প্রশাসক আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় প্রতিনিধি হিসেবে ডাক পান না। এছাড়া সাধারণ মানুষ ওই প্রস্তুতিসভায় উপস্থিত থাকতে পারেন না।
বিবার্তা/তুহিন/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]