শিরোনাম
প্রতিবাদের প্রতীক মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ২০:০০
প্রতিবাদের প্রতীক মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধ ইসমাইল হোসেন অভিমান করে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রত্যাখানের মাধ্যমে এক প্রতিবাদী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।এ নিয়ে বিভাগীয় ও স্থানীয়ভাবে দুটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। সর্বত্র তোলপাড় চলছে। বইছে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার ছেলের হারানো চাকরি ও বাড়ি ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু চাকরি বা বাড়ি কোনোটাই এখন আর নিতে চায়না এ প্রতিবাদী মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। এ পরিবারটি এখন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী বক্তিদের শান্তি দাবি করেছেন।


‘এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি ছেলেকে চাকরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে। তাই মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা হিসেবে তাদের সালাম/ স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে নিতে চাইনা আমি।’


অভিমানী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন তার মৃত্যুর ২ দিন আগে এমন চিঠি লিখে যাওয়ার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বরাররে এমন একটি চিঠি লিখে যান। যেখানে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সুপারিশে ছেলে নুর ইসলামের নো ওয়ার্ক নো পে ভিক্তিতে এসিল্যান্ডের গাড়ি চালক হিসাবে চাকরি হয় ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে এসিল্যান্ড তাকে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিচ্যুত করেন। পরে বিষয়টি হুইপ ইকবালুর রহিমকে জানালে তিনি বিষয়টি এডিসিকে দেখতে বলেন। কিন্তু এরপরেও চাকরি ফেরত না পাওয়ায় জেলা প্রশাসককে জানাতে গেলে জেলা প্রশাসক তার উপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি আরো লিখেছেন, জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে করা স্বাধীন দেশে আমার ছেলের রুজি রোজগারটুকুও অন্যায় ভাবে কেড়ে নেয়া হলো। গত ২১ অক্টোবর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দিনাজপুরের কার্ডিওলজি বিভাগে, ওয়ার্ড নং -২, বেড নং -৪৪ এ ভর্তি অবস্থায় আছি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম/ স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাইনা।


পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, ২২ অক্টোবর চিঠিটিতে তিনি স্বাক্ষর করে ডাক যোগে ঢাকায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বরাবরে প্রেরণ করেন। পরের দিন ২৩ অক্টোবর সকাল ১১ টার সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবস্থায় মারা যান।


বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু জাতির শ্রেষ্ট সন্তানের শেষ বিদায়ের সময় সেখানে বিগউলে বাজেনি বিদায়ের সুর। জানাযার পূর্ব মুহূর্তে ম্যাজিস্ট্রেট মহসীন উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনের চৌকশদল গার্ড অব অনার জানাতে গেলে বাধা দেয় পরিবার ও এলাকাবাসী। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের মরদেহ জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করা হয়নি।


দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬ নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের যোগীবাড়ী গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে সরজমিনে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি আরো অনেকের দেখা মিলেছে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের দাফনের বিষয়টি এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনের হেলালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতাই বলে উল্লেখ করছেন। ক্ষোভ জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আলীসহ স্থানীয় অনেকেই।


দুঃখ,কষ্ট ও ক্ষোভ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। প্রতিবাদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নেননি তিনি। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ভাতিজা সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন দুলাল।


দিনাজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধ ইসমাইল হোসেন অভিমান করে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রত্যাখানের মাধ্যমে এক প্রতিবাদী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।এ নিয়ে বিভাগীয় ও স্থানীয়ভাবে দুটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। সর্বত্র তোলপাড় চলছে। বইছে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড়। এর প্রেক্ষিতে তার ছেলের হারানো চাকরি ও বাড়ি ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।


কিন্তু চাকরি বা বাড়ি কোনোটাই এখন আর নিতে চায়না এ প্রতিবাদী মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। এ পরিবারটি এখন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষি বক্তিদের শান্তি দাবী করছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন স্ত্রী নুরনাহার ছেলে নুরুজ্জামান ও নুর ইসলাম।


শুক্রবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহমুদুল আলম প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের পরিবারের স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। মুক্তিযোদ্ধ ইসমাইল হোসেনের যে ছেলেকে কেন্দ্র করে এতোকিছু সেই ছেলে নুর ইসলামের হারানো চাকরি ও বাড়ি ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি। তবে নুর ইসলাম নেশাগ্রস্ত এবং তাকে দিয়ে কোনো ভালোকাজ সম্ভব নয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম।


অন্যদিকে এ ঘটনায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনার একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন শনিবার বিকেলে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের পরিবারের স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। সেখানে পরিবারের স্বজনদের সাথে কথা বলেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদস্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তাদের।


মুক্তযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন অভিমান করে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রত্যাখানের মাধ্যামে এক প্রতিবাদী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ কারণে তার ছেলের হারানো চাকরি আর বাড়ি ফেরত পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলেও তিনি বঞ্চিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা থেকে। এতে লাভ-লোকসানের হিসেব না কষলেও মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন মৃত্যুর পরও এক প্রতিবাদী প্রতীক হিসেবে ইতিহাস হয়ে থাকবেন। এমনটাই মনে করছেন দিনাজপুরবাসী।


বিবার্তা/শাহী/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com